সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম

হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করেছে ইসরায়েল

দৈনিক দেশ আমার ডেস্ক / ১২৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩

জেরুজালেম, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস ডেস্ক): সাত সপ্তাহের নৃশংস এবং রক্তাক্ত যুদ্ধ থামানোর জন্য একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্থগিত করে ইসরায়েল বলেছে, চার দিনের গাজা যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত শুরু হবে না।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হ্যানেগবি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, হামাসের হাতে বন্দী অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশী জিম্মির মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত তা হবে না।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের জিম্মিদের মুক্তির জন্য যোগাযোগ ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে এবং অব্যাহত রয়েছে।’
‘মুক্তির শুরুটি উভয় পক্ষের মধ্যে মূল চুক্তি অনুযায়ী হবে, শুক্রবারের আগে নয়।’
একজন দ্বিতীয় ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার যুদ্ধ থামবে না।
প্রিয়জনদের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় মরিয়া পরিবারগুলো এবং ৪৭ দিনের যুদ্ধ ও ধ্বংসের অবসানের জন্য প্রার্থনারত দুই মিলিয়নেরও বেশি গাজাবাসীর জন্য এই বিলম্ব একটি বড় আঘাত।
জটিল এবং সতর্কতার সাথে কোরিওগ্রাফ করা চুক্তিটি দেখেছে ইসরায়েল এবং এতে হামাস যোদ্ধারা চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে ৭ অক্টোবরের হামলার সময় হামাসের হাতে আটক কমপক্ষে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
মুক্তির জন্য নির্ধারিত জিম্মিদের মধ্যে তিন বছর বয়সী অ্যাবিগেল মোর ইদানসহ তিনজন আমেরিকান রয়েছেন।
ইসরায়েলি সরকারের একটি নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি ১০ জন অতিরিক্ত জিম্মি মুক্তির জন্য যুদ্ধে একটি অতিরিক্ত দিনের ‘বিরতি’ থাকবে।
পরিবর্তে, ইসরায়েল কমপক্ষে ১৫০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে এবং কয়েক সপ্তাহের বোমাবর্ষণ, ভারী লড়াই এবং ইসরায়েলি অবরোধের পর গাজায় আরও মানবিক সহায়তার অনুমতি দেবে।
বিলম্বের কারণ কি বা এটি বাস্তবায়নে গুরুতর বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয় কি-না তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের কট্টর-ডান সরকারের কিছু লোকের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার থেকে চুক্তিটি কার্যকর হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
কট্টরপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন-গভির চুক্তিটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা হামাসকে উৎসাহিত করবে এবং ইসরায়েলি সেনাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজায় ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের বেশীরভাগ শিশু ও নারী।
কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশরের মধ্যস্থতায় হামাসের সাথে সম্পাদিত চুক্তি সমর্থন করে ইসরায়েলের বিপর্যস্ত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তিটি অস্থায়ী হবে এবং হামাসকে ধ্বংস করার ইসরায়েলি অভিযান শেষ করবে না।
ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের আবাসস্থল গাজা এবং লেবানন থেকে উদ্ভূত হুমকি থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বুধবার তিনি বলেন, ‘আমরা জিতেছি এবং নিরঙ্কুশ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে উত্তেজনা বেয়ে যায়, হিজবুল্লাহ বলেছে, একজন সিনিয়র আইন প্রণেতার ছেলেসহ পাঁচজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর আব্বাস রাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বেইত ইয়াহুনের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় তার ছেলে এবং অন্যরা নিহত হয়েছে।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবানন এবং ইসরায়েলের মধ্যকার সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে, যা গাজা যুদ্ধের বৃহত্তর দাবানলকে ইন্ধন জোগাবে বলে আশঙ্কা করছে।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস জানায়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন এবং ‘লেবানিজ সীমান্তের পাশাপাশি পশ্চিম তীরে শান্ত রাখার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।’
হোয়াইট হাউস ইসরায়েলকে হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষ না বাড়াতে চাপ দিয়েছে। যা মার্কিন ও ইরানী বাহিনীকে টেনে আনতে পারে।
ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি বন্দীদের তালিকায় ১৮ বছরের কম বয়সী ১২৩ জন এবং ৩৩ জন মহিলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় খান ইউনিসে যুদ্ধে ক্লান্ত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েল-হামাস চুক্তির বিষয়ে সন্দিহান।
উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসে দক্ষিণ গাজায় একটি হাসপাতালে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৩৫ হাজার বাস্তুচ্যুতদের একজন মায়সারা আসাবাগ বলেছেন, ‘তারা কোন যুদ্ধবিরতির কথা বলছে? শুধু সাহায্য আসতে পারে আমাদের এমন যুদ্ধবিরতি দরকার নেই, আমরা বাড়ি যেতে চাই।’
হাজার হাজার বিমান হামলায় গাজার বড় অংশ সমতল হয়ে গেছে এবং এই অঞ্চলে খাদ্য, পানি ও জ্বালানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল এখনো উত্তর গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এবং আশপাশের বাড়িগুলোতে হামলার রিপোর্ট করছে।
চিকিৎসা কর্মীরা সেখানে রক্তাক্ত ধুলোয় ঢাকা বেঁচে যাওয়া লোকদের চিকিৎসা করেছিলেন যখন অন্যান্য বাসিন্দারা পালিয়ে ধ্বংসাবশেষ-বিস্তৃত রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর