ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আরাকান আর্মির জলকেলি

সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন

নুরুল বশর
  • আপডেট সময় : ১০:৩১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • / 116

সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা ইউনিফর্ম ও অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে ‘জলকেলি উৎসব’ উদযাপন করেছে। উৎসবটি গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজিবির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তারা পুরো সময় নিষ্ক্রিয় ছিল, যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

উৎসবে আরাকান আর্মির কমান্ডার লাভ্রে (স্থানীয় নাম কুখাই রাখাইন), ইউএলএ নেতা মংথুইহ্লা মারমা, লেফটেন্যান্ট জোকা, ক্যাপ্টেন ক্যজো রাখাইন, ক্যাপ্টেন ভোলং রাখাইনসহ শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। মঞ্চ ও আশেপাশে ছিল আরাকান আর্মি এবং ইউএলএর পতাকা ও প্রতীক। অনুষ্ঠান চলাকালে তারা অস্ত্রসহ মঞ্চে উঠে পারফর্ম করে এবং বক্তব্য প্রদান করে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অবমাননার শামিল।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থানচি উপজেলা বিএনপি সদস্য, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো, রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈইথুই মারমা রনি, তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমা, জেএসএস যুব সমিতির সভাপতি নুমংপ্রু মারমা ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।

সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন
সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন

বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সেখানে ছিল, তবে আরাকান সদস্যদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও উৎসবের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ইউনিফর্মধারী অস্ত্রধারী সদস্যরা সঙ্গীত ও নৃত্যে অংশ নিচ্ছে এবং বক্তব্য দিচ্ছে।

উৎসবে দেওয়া বক্তৃতায় আয়োজকরা প্রকাশ্যে বলেন, এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে “আরাকান আর্মির সহযোগিতায়”, এবং পাহাড়িদের “আত্মপরিচয় ও সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রতীক” হিসেবে আখ্যায়িত করে আরাকান আর্মিকে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়। এ বক্তব্য শুধু সাংস্কৃতিক নয়, বরং আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার একটি পরিষ্কার ঘোষণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীর এমন প্রকাশ্য কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে একধরনের দখলদারী মানসিকতার অনুশীলন। আরাকান আর্মির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে প্রভাবিত করে সাংগঠনিক সংহতি, প্রশিক্ষণ এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

বিজিবির গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াসির জাহান হোসেন দাবি করেন, উৎসবে অংশ নেওয়া নারীদের পোশাক আরাকান আর্মির নয় এবং এই অনুষ্ঠানে আরাকান সদস্যরা অংশ নেয়নি বলে তিনি নিশ্চিত নন। বান্দরবানের পুলিশ সুপারও জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি তদন্ত করছে।

রেমাক্রিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি জলকেলি উৎসব ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত এবং একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ‘প্রতীকী দখলদারিত্বের’ প্রকাশ্য প্রদর্শনী। সময় থাকতে কঠোর ও সুসংহত পদক্ষেপ না নিলে এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আরাকান আর্মির জলকেলি

সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন

আপডেট সময় : ১০:৩১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি মুখ এলাকায়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা ইউনিফর্ম ও অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে ‘জলকেলি উৎসব’ উদযাপন করেছে। উৎসবটি গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজিবির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তারা পুরো সময় নিষ্ক্রিয় ছিল, যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

উৎসবে আরাকান আর্মির কমান্ডার লাভ্রে (স্থানীয় নাম কুখাই রাখাইন), ইউএলএ নেতা মংথুইহ্লা মারমা, লেফটেন্যান্ট জোকা, ক্যাপ্টেন ক্যজো রাখাইন, ক্যাপ্টেন ভোলং রাখাইনসহ শতাধিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। মঞ্চ ও আশেপাশে ছিল আরাকান আর্মি এবং ইউএলএর পতাকা ও প্রতীক। অনুষ্ঠান চলাকালে তারা অস্ত্রসহ মঞ্চে উঠে পারফর্ম করে এবং বক্তব্য প্রদান করে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি অবমাননার শামিল।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন থানচি উপজেলা বিএনপি সদস্য, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য খামলাই ম্রো, রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈইথুই মারমা রনি, তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমা, জেএসএস যুব সমিতির সভাপতি নুমংপ্রু মারমা ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।

সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন
সীমান্তে উৎসবের নামে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন

বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সেখানে ছিল, তবে আরাকান সদস্যদের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও উৎসবের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ইউনিফর্মধারী অস্ত্রধারী সদস্যরা সঙ্গীত ও নৃত্যে অংশ নিচ্ছে এবং বক্তব্য দিচ্ছে।

উৎসবে দেওয়া বক্তৃতায় আয়োজকরা প্রকাশ্যে বলেন, এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে “আরাকান আর্মির সহযোগিতায়”, এবং পাহাড়িদের “আত্মপরিচয় ও সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রতীক” হিসেবে আখ্যায়িত করে আরাকান আর্মিকে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়। এ বক্তব্য শুধু সাংস্কৃতিক নয়, বরং আদর্শিক ও রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার একটি পরিষ্কার ঘোষণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীর এমন প্রকাশ্য কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে একধরনের দখলদারী মানসিকতার অনুশীলন। আরাকান আর্মির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে প্রভাবিত করে সাংগঠনিক সংহতি, প্রশিক্ষণ এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

বিজিবির গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াসির জাহান হোসেন দাবি করেন, উৎসবে অংশ নেওয়া নারীদের পোশাক আরাকান আর্মির নয় এবং এই অনুষ্ঠানে আরাকান সদস্যরা অংশ নেয়নি বলে তিনি নিশ্চিত নন। বান্দরবানের পুলিশ সুপারও জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি তদন্ত করছে।

রেমাক্রিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি জলকেলি উৎসব ছিল না। এটি ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত এবং একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ‘প্রতীকী দখলদারিত্বের’ প্রকাশ্য প্রদর্শনী। সময় থাকতে কঠোর ও সুসংহত পদক্ষেপ না নিলে এটি ভবিষ্যতে দেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে।