ইসরায়েলের দেড় শতাধিক স্থাপনায় ইরানের ব্যাপক হামলা

- আপডেট সময় : ০৩:৩৩:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / 95

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামে ইরান পরিচালিত এক সামরিক অভিযানে ইসরায়েলের দেড় শতাধিক স্থাপনায় একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন) গভীর রাতে এই হামলা চালায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। সংস্থাটির উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদি বাহিদি নিশ্চিত করেছেন, হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, গোয়েন্দা ও কৌশলগত অবকাঠামো।
তেহরানভিত্তিক তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, হামলায় মূলত নেভাতিম ও ওভদা বিমানঘাঁটিকে কেন্দ্র করে আঘাত হানা হয়। এই দুই ঘাঁটি থেকেই ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছিল। এছাড়াও, তেল আবিব উপকণ্ঠের টেল নোফ বিমানঘাঁটি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ড্রোন ও মিসাইল কমান্ড সেন্টার, সেনাবাহিনীর গোপন অস্ত্রভাণ্ডার এবং শিল্প সামরিক কারখানাগুলোও লক্ষ্যবস্তু ছিল।
ইরান দাবি করেছে, হামলায় শতাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সাঁজোয়া ড্রোন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।
এই অভিযান মোট পাঁচটি ধাপে চালানো হয়। প্রথমে ড্রোন দিয়ে প্রাথমিক লক্ষ্য চিহ্নিত ও বিভ্রান্তিমূলক আঘাত হানা হয়। পরবর্তীতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে বিমানঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তৃতীয় ধাপে সাইবার হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত করা হয় বলে ইরানি সূত্রের দাবি। এরপর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে সরাসরি আঘাত হানা হয় সেনা সদরদপ্তর ও কমান্ড সেন্টারে।
এই হামলাকে ইরান একটি “প্রতিরোধমূলক বৈধ জবাব” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। আইআরজিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যারা আমাদের বিজ্ঞানী, সামরিক নেতা ও নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করে, তারা যেন জানে—এমন অপরাধের পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই এই প্রসঙ্গে বলেন, “ইসরায়েল অপরাধ করেছে। এর ভয়াবহ ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি তাদের ভোগ করতেই হবে। এই অঞ্চল থেকে অন্যায় ও সন্ত্রাসের শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
হামলার পর এখনো ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তেল আবিব ও হাইফায় ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয় এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বাজিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী জরুরি বৈঠকে বসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। কূটনৈতিক সমাধানের পথ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নতুন করে উদ্বেগে পড়েছে এই অঞ্চলজুড়ে সম্ভাব্য পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কায়।