ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • / 116

আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এরইমধ্যে মক্কার কাছাকাছি মিনায়, যা তাঁবুর শহর নামে পরিচিত, অবস্থান নিয়েছেন লাখ লাখ হাজি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করে তারা ইবাদতে মগ্ন রয়েছেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) তারা রওনা হবেন পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে—যেখানে সম্পন্ন হবে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। ইসলাম ধর্ম মতে, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজের মূল অংশ। এজন্য ৯ জিলহজ তারিখটিকে “হজের দিন” বলা হয়।

এদিন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’—এই পবিত্র ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে আরাফাত প্রান্তর। দুই খণ্ড সাদা কাপড়ে ইহরাম পরিহিত পুরুষ হাজিরা ও সাদামাটা পোশাকে নারীরা একত্র হবেন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে।

চলতি বছরে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার মুসলিম হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গেছেন। স্থানীয় হজযাত্রীসহ মোট সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৬ হাজার ৯৫৮ জন।

আরাফাতের দিনে মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেবেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শেখ সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর খুতবা শুরু হবে এবং তা একযোগে ৩৪টি ভাষায় অনূদিত হবে।

সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানেই রাতযাপন, ইবাদত এবং পাথর সংগ্রহ করবেন। পরদিন ১০ জিলহজ তারা ফিরবেন মিনায়। সেখানে বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটা এবং পরে কাবা শরিফে গিয়ে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করবেন।

আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির
আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির

এরপর হাজিরা আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ তিনটি শয়তান—বড়, মাঝারি ও ছোট—প্রতিটির উদ্দেশ্যে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফে বিদায়ি তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিকতা।

তবে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। সৌদি আরবে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে না গিয়ে তাঁবুর ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

গত বছর অতিরিক্ত তাপদাহে ১ হাজার ৩০১ জন হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন অনিবন্ধিত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবছর নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ৫০ হাজার বর্গমিটার নতুন ছায়াযুক্ত এলাকা যোগ করা হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিট এবং মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার চিকিৎসাকর্মী।

এছাড়া হজ ব্যবস্থাপনায় এবার যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) প্রযুক্তি। ড্রোন ক্যামেরা ও তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসমাগম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনিবন্ধিত হাজিদের ঠেকাতে চালানো হচ্ছে নিয়মিত অভিযান, পাঠানো হচ্ছে টেক্সট সতর্কতা এবং চলছে ড্রোন নজরদারি।

সব মিলিয়ে এবারের হজ যেন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়, সেই প্রত্যাশায় প্রস্তুত পুরো সৌদি প্রশাসন ও হাজিদের সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা।
আরাফার ময়দানে বৃহস্পতিবার আবারও প্রতিধ্বনিত হবে সেই চিরন্তন আহ্বান—
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” — আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির!

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির

আপডেট সময় : ১২:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এরইমধ্যে মক্কার কাছাকাছি মিনায়, যা তাঁবুর শহর নামে পরিচিত, অবস্থান নিয়েছেন লাখ লাখ হাজি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে অবস্থান করে তারা ইবাদতে মগ্ন রয়েছেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) তারা রওনা হবেন পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে—যেখানে সম্পন্ন হবে হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। ইসলাম ধর্ম মতে, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজের মূল অংশ। এজন্য ৯ জিলহজ তারিখটিকে “হজের দিন” বলা হয়।

এদিন ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’—এই পবিত্র ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে আরাফাত প্রান্তর। দুই খণ্ড সাদা কাপড়ে ইহরাম পরিহিত পুরুষ হাজিরা ও সাদামাটা পোশাকে নারীরা একত্র হবেন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে।

চলতি বছরে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার মুসলিম হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গেছেন। স্থানীয় হজযাত্রীসহ মোট সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গেছেন ৮৬ হাজার ৯৫৮ জন।

আরাফাতের দিনে মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেবেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শেখ সালেহ বিন হুমাইদ। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার পর খুতবা শুরু হবে এবং তা একযোগে ৩৪টি ভাষায় অনূদিত হবে।

সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। সেখানেই রাতযাপন, ইবাদত এবং পাথর সংগ্রহ করবেন। পরদিন ১০ জিলহজ তারা ফিরবেন মিনায়। সেখানে বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটা এবং পরে কাবা শরিফে গিয়ে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করবেন।

আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির
আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির

এরপর হাজিরা আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ তিনটি শয়তান—বড়, মাঝারি ও ছোট—প্রতিটির উদ্দেশ্যে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফে বিদায়ি তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের পূর্ণাঙ্গ আনুষ্ঠানিকতা।

তবে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। সৌদি আরবে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে না গিয়ে তাঁবুর ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।

গত বছর অতিরিক্ত তাপদাহে ১ হাজার ৩০১ জন হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন অনিবন্ধিত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবছর নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ৫০ হাজার বর্গমিটার নতুন ছায়াযুক্ত এলাকা যোগ করা হয়েছে, স্থাপন করা হয়েছে ৪০০টির বেশি শীতলীকরণ ইউনিট এবং মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার চিকিৎসাকর্মী।

এছাড়া হজ ব্যবস্থাপনায় এবার যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) প্রযুক্তি। ড্রোন ক্যামেরা ও তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসমাগম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনিবন্ধিত হাজিদের ঠেকাতে চালানো হচ্ছে নিয়মিত অভিযান, পাঠানো হচ্ছে টেক্সট সতর্কতা এবং চলছে ড্রোন নজরদারি।

সব মিলিয়ে এবারের হজ যেন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়, সেই প্রত্যাশায় প্রস্তুত পুরো সৌদি প্রশাসন ও হাজিদের সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা।
আরাফার ময়দানে বৃহস্পতিবার আবারও প্রতিধ্বনিত হবে সেই চিরন্তন আহ্বান—
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” — আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির!