ঢাকা ০৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় : ১০:২৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / 309

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণ

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও উখিয়ায় নতুন করে আশ্রয়ণ ঘর নির্মাণকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী মহল সচেতনভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে এবং গোপনে আরও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (RRRC) তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি উখিয়ার ১৪ নম্বর ক্যাম্পে ‘সাওয়াব’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) প্রায় ১৫০টি ঘর নির্মাণ করেছে, যাকে ‘আমেনা ভিলেজ’ নাম দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জলাধার ভরাট করে ও গাছ কেটে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা আগমনের কারণে তারা জমি, বাগান ও জলাধার হারিয়ে জীবিকার প্রধান উৎস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তারা এখনো কার্যকর কোনো সহায়তা পাননি।

সামাজিক বনায়নের অংশীদার আবছার উদ্দিন বলেন, “গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এই অবস্থায় নতুন করে ঘর তৈরি করা মানে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা।”

সূত্র জানায়, সম্প্রতি আবারও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তারা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। অনেকেই সরকারি রেজিস্ট্রারে না থাকলেও আন্তর্জাতিক সংস্থার তালিকায় যুক্ত হয়ে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন।

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণ
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণ

‘সাওয়াব’ এনজিওর নির্মাণকাজ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই শেডগুলো সামাজিক বনায়নের হাজারো গাছ কেটে ও জলাধার ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শরণার্থী কমিশন, জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীরা।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিনুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। তবে শেল্টার নির্মাণ এলাকা কাটাতারের ভেতরে হওয়ায় বন বিভাগের এখতিয়ার সীমিত।”

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “নতুন শেড নির্মাণের বিষয়টি আমরা জানি। ‘সাওয়াব’ নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে পরিবেশগত ক্ষতি প্রমাণিত হলে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন বলেন, “শুরুতে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এটি যেন এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।”

তিনি প্রশ্ন তুলেন, “ভাসানচরে যখন শূন্য শেড পড়ে আছে, তখন উখিয়ায় নতুন করে ঘর বানানোর প্রয়োজনীয়তা কী?”

স্থানীয়রা মনে করেন, দেশি-বিদেশি কিছু এনজিও রোহিঙ্গা ইস্যুকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানিয়ে তুলেছে। তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হোক এবং স্থানীয়দের অধিকার নিশ্চিত করা হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন

One thought on “উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

আপডেট সময় : ১০:২৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও উখিয়ায় নতুন করে আশ্রয়ণ ঘর নির্মাণকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী মহল সচেতনভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে এবং গোপনে আরও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (RRRC) তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি উখিয়ার ১৪ নম্বর ক্যাম্পে ‘সাওয়াব’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) প্রায় ১৫০টি ঘর নির্মাণ করেছে, যাকে ‘আমেনা ভিলেজ’ নাম দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জলাধার ভরাট করে ও গাছ কেটে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা আগমনের কারণে তারা জমি, বাগান ও জলাধার হারিয়ে জীবিকার প্রধান উৎস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অথচ সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তারা এখনো কার্যকর কোনো সহায়তা পাননি।

সামাজিক বনায়নের অংশীদার আবছার উদ্দিন বলেন, “গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এই অবস্থায় নতুন করে ঘর তৈরি করা মানে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা।”

সূত্র জানায়, সম্প্রতি আবারও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তারা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। অনেকেই সরকারি রেজিস্ট্রারে না থাকলেও আন্তর্জাতিক সংস্থার তালিকায় যুক্ত হয়ে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন।

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণ
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের নতুন শেল্টার নির্মাণ

‘সাওয়াব’ এনজিওর নির্মাণকাজ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই শেডগুলো সামাজিক বনায়নের হাজারো গাছ কেটে ও জলাধার ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শরণার্থী কমিশন, জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীরা।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিনুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। তবে শেল্টার নির্মাণ এলাকা কাটাতারের ভেতরে হওয়ায় বন বিভাগের এখতিয়ার সীমিত।”

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “নতুন শেড নির্মাণের বিষয়টি আমরা জানি। ‘সাওয়াব’ নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। তবে পরিবেশগত ক্ষতি প্রমাণিত হলে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন বলেন, “শুরুতে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এটি যেন এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।”

তিনি প্রশ্ন তুলেন, “ভাসানচরে যখন শূন্য শেড পড়ে আছে, তখন উখিয়ায় নতুন করে ঘর বানানোর প্রয়োজনীয়তা কী?”

স্থানীয়রা মনে করেন, দেশি-বিদেশি কিছু এনজিও রোহিঙ্গা ইস্যুকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানিয়ে তুলেছে। তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হোক এবং স্থানীয়দের অধিকার নিশ্চিত করা হোক।