বিএনপিকে ঘায়েল ত্বত্ত্বে উল্টো চাপে এনসিপি-জামায়াত

- আপডেট সময় : ০৩:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
- / 193

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তিনটি দলই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে চাপে ফেলার জন্য এনসিপি ও জামায়াতের অস্তিত্ব ও কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ এই দুই দলকে ব্যবহার করে বিএনপির রাজনৈতিক জোর কমাতে চাচ্ছে। কিন্তু এ পথে এনসিপি ও জামায়াতই সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক চাপে পড়েছে।
জামায়েতে ইসলামী বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল হলেও তাদের নির্বাচন অধিকার নানা সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর তাদের অবস্থান সংকটাপন্ন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে কাজ করায় তাদের বিরুদ্ধে দেশের বড় একটি অংশের আস্থা ছিল না। ফলে জামায়াত দীর্ঘ সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত থেকেছে।
তবে সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলেছে। জামায়াত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তারা বিএনপির মূল সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা ও নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ কারণে জামায়াতের ভোট অধিকার একটি দীর্ঘ সংগ্রামের বিষয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন হলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে একটা শ্রেণীর মধ্যে। তবে তাদের নিবন্ধন আজো সরকারি অনুমোদন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও ভোটরদের মনে স্থান দখল করার মতো অবস্থায় এখনো পৌঁছাতে পারেনি দলটি।
২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দলটি গঠন হওয়ার পর থেকে তারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এনসিপি নেতারা মনে করেন, তাদের নিবন্ধন পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নিজেই এনসিপির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
এই নিবন্ধন না পাওয়া পরিস্থিতি এনসিপিকে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল করে তুলেছে এবং তাদের কার্যক্রম সীমিতও করেছে কিছুক্ষেত্রে।
তবে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে টেক্কা দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছে ছাত্রদের নিয়ে গড়া এই এনসিপি। ফলে এনসিপির নিবন্ধন, নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহুল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করতে এনসিপি ও জামায়াতকে ‘চাপে ফেলা’ এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বেড়েছে। এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ থাকলেও তারা তা স্বীকার করেন না। সরকারের ছত্রছায়ায় বরং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে নানা ধরণের নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে।

একইভাবে জামায়াতও নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরে পেয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে সরাসরি রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিয়েছে। যদিও ভোটের মাঠে এককভাবে নির্বাচন করলে জামায়াত কত শতাংশ ভোট পাবে, সেটা নির্বাচন শেষেই বুঝা যাবে। নিজেদের রাজনৈতিক মাঠ দখল রাখতে দলটি বিএনপিকেই টার্গেট করছে। এমনকি জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে সব সময় আওয়ামী লীগের মাফিয়াতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না দলটি।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপি ও জামায়াতের বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ভবিষ্যতের স্বৈরাচার আখ্যা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। যদিও এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল। তবে এই পরিকল্পনায় এনসিপি ও জামায়াত নিজেই রাজনৈতিক সংকটে পড়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্ব ও জনপ্রিয়তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান ও ভূমিকা ইতিহাস এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির গভীর প্রভাব বহন করে। জামায়াতের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার দীর্ঘ সংগ্রাম এবং এনসিপির নিবন্ধন না পাওয়ার বাধা এই দুই দলের রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে দুর্বল করতে এ দুই দলের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার জন্য সকল দলের সমান সুযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরি, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।