ঢাকা ০১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

পাকিস্তানে নিরাপত্তা বৈঠক, সম্পর্কে চরম উত্তেজনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / 142

কাশ্মির

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান। মূলত ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এই বৈঠক ডেকেছে।

বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে। কাশ্মিরের এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং এই ঘটনায় পাকিস্তানের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে ভারত।

এতে করে দুই দেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে পাকিস্তান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এ বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং সাধারণত কেবলমাত্র বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা বহিরাগত হুমকির সময় এই ধরনের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার।

পাকিস্তান
পাকিস্তান

এর আগে, হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে বুধবার বেশ কিছু কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভারত পাকিস্তানকে “সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদে” সহায়তার অভিযোগ এনে পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় দেশের মধ্যকার প্রধান স্থল সীমান্তও বন্ধ করে দেয়। এছাড়া পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের কিছু ভিসা বাতিল ও দুই দিনের মধ্যে তাদের ভারত ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

হামলাটি ঘটে মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে, যা হিমালয়ের মনোরম একটি এলাকা। সেখানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই ভারতীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে একজন কেবল নেপালের নাগরিক ছিলেন। গত ২৫ বছরে কাশ্মিরে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ড।

ভারতের পুলিশ দাবি করেছে, এই হামলার পেছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের হাত রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। যদিও “কাশ্মির রেজিস্ট্যান্স” নামে একটি পূর্বে অজ্ঞাত গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।

তারা দাবি করেছে, ভারত সরকার কাশ্মিরে প্রায় ৮৫ হাজার “বহিরাগত” বসতি স্থাপন করেছে এবং নিহতরা “সাধারণ পর্যটক নয়, বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট”। তবে এই দাবির স্বতন্ত্র কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে পাকিস্তান এই হামলাকে ভারতের “ফলস ফ্ল্যাগ (false flag)” অপারেশন বলে আখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তারা দাবি করছে, ভারত নিজেরাই এই হামলা সাজিয়েছে যেন পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর “প্রত্যুত্তরমূলক জবাব” দেওয়া হবে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এই হামলাকে “ফলস ফ্ল্যাগ” বলে উল্লেখ করেছেন এবং পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “এই সম্ভাবনাকে কখনোই পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না।”

উল্লেখ্য, কাশ্মিরের ভারত-শাসিত অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মীরি মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন এবং তারা চায়, অঞ্চলটি হয় পাকিস্তানে যোগ দিক অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।

ভারত দাবি করে থাকে, এটি পাকিস্তান-প্রভাবিত “সন্ত্রাসবাদ”। অন্যদিকে পাকিস্তান বলে— এটি একটি বৈধ স্বাধীনতাকামী আন্দোলন। দীর্ঘ সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পাকিস্তানে নিরাপত্তা বৈঠক, সম্পর্কে চরম উত্তেজনা

আপডেট সময় : ১২:২৬:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে পাকিস্তান। মূলত ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতেই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এই বৈঠক ডেকেছে।

বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে। কাশ্মিরের এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং এই ঘটনায় পাকিস্তানের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে ভারত।

এতে করে দুই দেশের সম্পর্কে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জবাব দিতে পাকিস্তান তাদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এ বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং সাধারণত কেবলমাত্র বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা বহিরাগত হুমকির সময় এই ধরনের বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার।

পাকিস্তান
পাকিস্তান

এর আগে, হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে বুধবার বেশ কিছু কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভারত পাকিস্তানকে “সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদে” সহায়তার অভিযোগ এনে পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় দেশের মধ্যকার প্রধান স্থল সীমান্তও বন্ধ করে দেয়। এছাড়া পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের কিছু ভিসা বাতিল ও দুই দিনের মধ্যে তাদের ভারত ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

হামলাটি ঘটে মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে, যা হিমালয়ের মনোরম একটি এলাকা। সেখানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই ভারতীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে একজন কেবল নেপালের নাগরিক ছিলেন। গত ২৫ বছরে কাশ্মিরে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ড।

ভারতের পুলিশ দাবি করেছে, এই হামলার পেছনে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের হাত রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। যদিও “কাশ্মির রেজিস্ট্যান্স” নামে একটি পূর্বে অজ্ঞাত গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।

তারা দাবি করেছে, ভারত সরকার কাশ্মিরে প্রায় ৮৫ হাজার “বহিরাগত” বসতি স্থাপন করেছে এবং নিহতরা “সাধারণ পর্যটক নয়, বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট”। তবে এই দাবির স্বতন্ত্র কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

এদিকে পাকিস্তান এই হামলাকে ভারতের “ফলস ফ্ল্যাগ (false flag)” অপারেশন বলে আখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ তারা দাবি করছে, ভারত নিজেরাই এই হামলা সাজিয়েছে যেন পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো যায়। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর “প্রত্যুত্তরমূলক জবাব” দেওয়া হবে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও এই হামলাকে “ফলস ফ্ল্যাগ” বলে উল্লেখ করেছেন এবং পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, “এই সম্ভাবনাকে কখনোই পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না।”

উল্লেখ্য, কাশ্মিরের ভারত-শাসিত অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। বহু কাশ্মীরি মুসলিম বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন এবং তারা চায়, অঞ্চলটি হয় পাকিস্তানে যোগ দিক অথবা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক।

ভারত দাবি করে থাকে, এটি পাকিস্তান-প্রভাবিত “সন্ত্রাসবাদ”। অন্যদিকে পাকিস্তান বলে— এটি একটি বৈধ স্বাধীনতাকামী আন্দোলন। দীর্ঘ সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন।