ঢাকা ০৪:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ঢল

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • / 203

টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ঢল

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ও সহিংসতার কারণে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। প্রতিদিনই টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। যেভাবে পারছে, তারা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। সীমান্ত পার হয়ে তারা কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে কিছুদিন অবস্থান করলেও পরে নজরদারি এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নদীপথে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে। ভাষাগত মিল ও স্থানীয় পরিবেশে সহজ অভিযোজনের কারণে চট্টগ্রাম তাদের প্রথম পছন্দ বলে জানা গেছে।

গত এপ্রিল মাসে কক্সবাজারের বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবার। তাদের ভাষ্য, আরাকান আর্মি এখন রাখাইনে চরম দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তারা যুবকদের জিম্মি করে নির্মাণ কাজে বাধ্য করছে, রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিচ্ছে এবং খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে নিয়মিত। এই নির্যাতন থেকে বাঁচতেই তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত এক বছরে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তবে সীমান্ত এলাকার স্থানীয়দের দাবি, গত ছয় মাসেই প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে, যাদের অনেকেই ক্যাম্প ছেড়ে অন্য জেলায় চলে গেছে।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখন স্থান সংকুলান, খাদ্যাভাব এবং নিরাপত্তা সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, মিয়ানমারের নতুন দখলদার শক্তি রোহিঙ্গাদের মাদক ও চোরাচালানে জড়াতে বাধ্য করছে, যা সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সীমান্তে কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে এবং মাদক ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র মানবিক বিপর্যয়ের বিষয় নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে জটিল ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাদের ধারণা, রাখাইনকে একটি স্বাধীন অঞ্চল বানানোর কৌশলের অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বিতাড়ন করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মতে, নতুন করে এই অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

এদিকে, এখনো টেকনাফ সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আগুন ও ধোঁয়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তাৎক্ষণিক সহায়তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের ঢল

আপডেট সময় : ০৯:০৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ও সহিংসতার কারণে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। প্রতিদিনই টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। যেভাবে পারছে, তারা প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। সীমান্ত পার হয়ে তারা কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে কিছুদিন অবস্থান করলেও পরে নজরদারি এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নদীপথে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে। ভাষাগত মিল ও স্থানীয় পরিবেশে সহজ অভিযোজনের কারণে চট্টগ্রাম তাদের প্রথম পছন্দ বলে জানা গেছে।

গত এপ্রিল মাসে কক্সবাজারের বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবার। তাদের ভাষ্য, আরাকান আর্মি এখন রাখাইনে চরম দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তারা যুবকদের জিম্মি করে নির্মাণ কাজে বাধ্য করছে, রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিচ্ছে এবং খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে নিয়মিত। এই নির্যাতন থেকে বাঁচতেই তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, গত এক বছরে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তবে সীমান্ত এলাকার স্থানীয়দের দাবি, গত ছয় মাসেই প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে, যাদের অনেকেই ক্যাম্প ছেড়ে অন্য জেলায় চলে গেছে।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে এখন স্থান সংকুলান, খাদ্যাভাব এবং নিরাপত্তা সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, মিয়ানমারের নতুন দখলদার শক্তি রোহিঙ্গাদের মাদক ও চোরাচালানে জড়াতে বাধ্য করছে, যা সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, সীমান্তে কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে এবং মাদক ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই অনুপ্রবেশ শুধুমাত্র মানবিক বিপর্যয়ের বিষয় নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে জটিল ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাদের ধারণা, রাখাইনকে একটি স্বাধীন অঞ্চল বানানোর কৌশলের অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বিতাড়ন করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মতে, নতুন করে এই অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে ব্যাপকভাবে।

এদিকে, এখনো টেকনাফ সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আগুন ও ধোঁয়ার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তাৎক্ষণিক সহায়তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।