ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারত থেকে উদ্ধার দুই বাংলাদেশি তরুণী মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬, স্বজনদের আহাজারি বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে যোগ দিতে রোম গেলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস পূর্বের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবার দায়িত্বে থাকছেন না: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তারুণ্যের অঙ্গীকারে প্রবাসী নেতৃত্ব—জাপান কানসাই ইউনিট জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত নরসিংদীর আশিক খন্দকার বিমানবন্দরে সোহেল তাজের বিদেশযাত্রায় বাধা শ্যামনগরের ৭০ মণ্ডপে তারেক রহমানের আর্থিক উপহার নির্বাচন নিয়ে ‘নীলনকশা’ হলে জনগণ ছেড়ে দেবে না লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুক গ্রেপ্তার

১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের লাভ ও ক্ষতি: এক নজরে বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
  • / 219
দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘটিত ১২ দিনের সীমিত যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়। এই সংঘাত শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শনী ছিল না—বরং এটি ইরানের সামরিক সক্ষমতা, গোয়েন্দা কাঠামো, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং কূটনৈতিক কৌশলের এক গভীর পরীক্ষা ছিল।

যুদ্ধের সময় ইসরায়েল তেহরান, ইস্পাহান, তাবরিজ, নাতাঞ্জ, আরাকসহ একাধিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে—যেগুলো এতদিন ইরানের প্রতিরক্ষা বর্ম হিসেবে পরিচিত ছিল।
‘ইক্তেদার-১৪০৩’ সামরিক মহড়ায় ইরান দাবি করেছিল, এসব এলাকা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছে ইরানি সামরিক মহড়া, টার্গেট লোকেশন এবং কৌশলগত পরিকল্পনার তথ্য ছিল বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এর ফলে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রতি বিশ্বস্ততার সংকট তৈরি হয়েছে। দেশটিতে নিরাপত্তা খাতের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান ও পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

অবশ্য এই যুদ্ধ শুধু দুর্বলতা নয়, ইরানের আক্রমণাত্মক সক্ষমতাও তুলে ধরেছে। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বাস্তবে কুর্দি, বেলুচি, আরব ও আজেরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো বড় বিদ্রোহ হয়নি। দেশটির জনগণ জাতীয় ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে শাসনব্যবস্থা এখনো সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইরানের সামনে রয়েছে তিনটি কৌশলগত বিকল্প:

  1. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা:
    আবারও পরমাণু চুক্তিতে ফেরার সম্ভাবনা থাকলেও, অভ্যন্তরীণভাবে অনেকেই একে দুর্বলতা বা “অমর্যাদা” হিসেবে দেখছেন।

  2. কট্টর প্রতিরোধের পথে:
    পারমাণবিক কর্মসূচি আরও জোরদার করা, আঞ্চলিক প্রতিরোধ জোট (হিজবুল্লাহ, হুথি, হামাস)-এর সমর্থন বাড়ানো।

  3. কৌশলগত নমনীয়তা:
    সময় ও প্রেক্ষাপট বুঝে নমনীয় অবস্থান নেওয়া, যা সম্ভাব্য চাপ এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

এই যুদ্ধ ইরানের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে। ফলে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে পারে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

১২ দিনের এই সংঘাত ইরানের জন্য ছিল এক বহুস্তর বিশ্লেষণের ক্ষেত্র—একদিকে আত্মসমালোচনার কারণ, অন্যদিকে জাতীয় সংহতি ও আক্রমণাত্মক সক্ষমতার বার্তা। এখন ইরানের হাতে রয়েছে দুটি রাস্তা: আপস না প্রতিরোধ, সংস্কার না শুদ্ধি। এ সিদ্ধান্ত শুধু তেহরানের ভবিষ্যৎ নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত চিত্রকেও প্রভাবিত করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের লাভ ও ক্ষতি: এক নজরে বিশ্লেষণ

আপডেট সময় : ০৯:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

গত মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘটিত ১২ দিনের সীমিত যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়। এই সংঘাত শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শনী ছিল না—বরং এটি ইরানের সামরিক সক্ষমতা, গোয়েন্দা কাঠামো, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং কূটনৈতিক কৌশলের এক গভীর পরীক্ষা ছিল।

যুদ্ধের সময় ইসরায়েল তেহরান, ইস্পাহান, তাবরিজ, নাতাঞ্জ, আরাকসহ একাধিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে—যেগুলো এতদিন ইরানের প্রতিরক্ষা বর্ম হিসেবে পরিচিত ছিল।
‘ইক্তেদার-১৪০৩’ সামরিক মহড়ায় ইরান দাবি করেছিল, এসব এলাকা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছে ইরানি সামরিক মহড়া, টার্গেট লোকেশন এবং কৌশলগত পরিকল্পনার তথ্য ছিল বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এর ফলে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রতি বিশ্বস্ততার সংকট তৈরি হয়েছে। দেশটিতে নিরাপত্তা খাতের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান ও পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

অবশ্য এই যুদ্ধ শুধু দুর্বলতা নয়, ইরানের আক্রমণাত্মক সক্ষমতাও তুলে ধরেছে। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বাস্তবে কুর্দি, বেলুচি, আরব ও আজেরি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো বড় বিদ্রোহ হয়নি। দেশটির জনগণ জাতীয় ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে শাসনব্যবস্থা এখনো সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইরানের সামনে রয়েছে তিনটি কৌশলগত বিকল্প:

  1. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা:
    আবারও পরমাণু চুক্তিতে ফেরার সম্ভাবনা থাকলেও, অভ্যন্তরীণভাবে অনেকেই একে দুর্বলতা বা “অমর্যাদা” হিসেবে দেখছেন।

  2. কট্টর প্রতিরোধের পথে:
    পারমাণবিক কর্মসূচি আরও জোরদার করা, আঞ্চলিক প্রতিরোধ জোট (হিজবুল্লাহ, হুথি, হামাস)-এর সমর্থন বাড়ানো।

  3. কৌশলগত নমনীয়তা:
    সময় ও প্রেক্ষাপট বুঝে নমনীয় অবস্থান নেওয়া, যা সম্ভাব্য চাপ এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

এই যুদ্ধ ইরানের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে স্পষ্টভাবে সামনে এনেছে। ফলে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত ও শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে পারে। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

১২ দিনের এই সংঘাত ইরানের জন্য ছিল এক বহুস্তর বিশ্লেষণের ক্ষেত্র—একদিকে আত্মসমালোচনার কারণ, অন্যদিকে জাতীয় সংহতি ও আক্রমণাত্মক সক্ষমতার বার্তা। এখন ইরানের হাতে রয়েছে দুটি রাস্তা: আপস না প্রতিরোধ, সংস্কার না শুদ্ধি। এ সিদ্ধান্ত শুধু তেহরানের ভবিষ্যৎ নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত চিত্রকেও প্রভাবিত করবে।