নতুন সংবিধান, দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র চায় এনসিপি

- আপডেট সময় : ০৭:৫৭:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
- / 122

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে তাদের বহুল প্রতীক্ষিত ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’। রোববার, ৩ আগস্টের এই আয়োজনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মূল বক্তব্য দেন এবং ইশতেহারের ২৪টি দফা উত্থাপন করেন।
নতুন রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা
ইশতেহারে এনসিপি যে প্রস্তাবনা রেখেছে, তা মূলত একটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের আহ্বান। দলটি বলেছে, বর্তমান শাসনব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী, এবং সেটিকে বিলুপ্ত করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে স্বীকৃতি দেওয়া ও সেই অভ্যুত্থানে যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তাদের বিচারের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে।
আইনের শাসন ও প্রতিষ্ঠান সংস্কার
দলটি সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচারব্যবস্থা সংস্কার ও কার্যকর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা কাজ করবে। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এনসিপি প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সেবামুখী এবং দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিকেন্দ্রীকরণ ও অংশগ্রহণমূলক শাসন
ইশতেহারে উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছে ‘গ্রাম পার্লামেন্ট’ গঠনের প্রস্তাব, যার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দলটি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং শিক্ষাব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়।
সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি
ইশতেহারে ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি, নারীর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন, ধর্মীয় ও জাতিগত মর্যাদা সংরক্ষণ, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রমিক-কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এনসিপি তরুণদের ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত পরিকল্পনা
টেকসই কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং নদী ও সমুদ্র রক্ষা ইশতেহারের পরিবেশ সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত। শিল্পায়ন, বহুমুখী বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির রূপরেখাও এতে রয়েছে।
অভিবাসী ও বৈদেশিক নীতি
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা এবং বাংলাদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি গঠনের কথা বলেছে এনসিপি। জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিও নতুনভাবে পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তরুণদের সম্পৃক্ততা
সমাবেশে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থক। নতুন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘জুলাই আন্দোলনের’ শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ‘বিচার। সংস্কার। ভবিষ্যৎ।’ এই মূল মেসেজ সামনে রেখেই সমাবেশ পরিচালিত হয়।
দলীয় বার্তা: ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের আহ্বান
দলটির নেতারা জানান, ইশতেহারটি কেবল রাজনৈতিক অঙ্গীকার নয়, এটি একটি জনগণকেন্দ্রিক রোডম্যাপ, যা জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের ভিত্তি গড়তে চায়। তারা মনে করেন, বিচার, মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ইশতেহার অনুযায়ী, এনসিপির লক্ষ্য হলো ৬টি মূল স্তম্ভে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করা। এই নীতিপত্র “নতুন বাংলাদেশ ঘোষণা” শিরোনামে ৪৮ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত নথি হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, যা মুদ্রিত ও ডিজিটাল—উভয় সংস্করণেই পাওয়া যাচ্ছে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি নিজেদের নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। ইশতেহারটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।