যেসব কারণে নির্বাচনের আগে টেলিকম নীতিমালা চায় না বিএনপি

- আপডেট সময় : ০৫:৫৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / 57

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’ উদ্যোগটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হলেও আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। যদিও নীতিটির উদ্দেশ্য হলো লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি—যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে, যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব থেকে নীতিটির কিছু দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাতের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে—যা ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিএনপির আশঙ্কা ও সুপারিশসমূহ:
১. মার্কেটের একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি:
একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে, এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME)-দের আর্থিক ঝুঁকি:
নিয়ন্ত্রণ শিথিল (ডি-রেগুলেশন) করার পর স্থানীয় ISP বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের জন্য দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে, যা তাদের বড় ধরনের আর্থিক সংকটে ফেলতে পারে।
৩. বিদেশি মালিকানার বিষয়ে অস্পষ্টতা:
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা সীমা সংক্রান্ত পরিষ্কার নিয়ম না থাকায় খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে।
৪. নীতিমালায় অস্পষ্টতা ও ফাঁকফোকর:
উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।
মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগের সীমা স্পষ্ট নয়।
স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডসহ নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
৫. বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব:
একক লাইসেন্স বাধ্যবাধকতা SME-দের জন্য প্রতিকূল।
ANSP লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেবে।
‘ফিক্সড টেলিকম’ লাইসেন্সের আওতায় দেশব্যাপী সেবা ও উচ্চমান বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা SME-দের জন্য কঠিন হবে।
বড় কোম্পানিগুলোর অবকাঠামোগত আধিপত্য বজায় থাকবে।
কিছু ধারা বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রেখেছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং একচেটিয়াত্ব বাড়াবে।
৬. স্বচ্ছতার অভাব:
খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, শর্তাবলি, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
বিএনপির আহ্বান:
আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, SME, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে এবং পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ শেষে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক। বিশেষ করে, SME ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ক্ষতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জাতীয় পর্যায়ের এ ধরনের নীতি প্রণয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনুচিত হবে।
বিএনপি বিশ্বাস করে—সবার উপকারে আসে, এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।