ঘুষ নিতেন না, খুলেছিলেন কমিশন মন্ত্রণালয়

- আপডেট সময় : ০৯:৫৪:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / 41

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন ওবায়দুল কাদের। এ সময়ে নিজেকে দুর্নীতিবিরোধী বলে দাবি করলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি ঘুষের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেন কমিশন গ্রহণের নিয়ম—যা তার ব্যক্তিগত লাভের জন্যই পরিচালিত হতো। তার মন্ত্রণালয়কে কমিশন মন্ত্রণালয়ে রূপ দিয়েছিলেন কাদের।
সওজ ও সেতু বিভাগের বড় প্রকল্পগুলোতে কাজ পেতে হলে ঠিকাদারদের দিতে হতো ২০ শতাংশ কমিশন। এই কমিশনের অর্থ ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির সময়েই বরাদ্দ করা হতো। কমিশন পরিশোধ না করলে ঠিকাদারদের রাখা হতো কালো তালিকাভুক্ত। এমনকি ৪৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমিশনের অর্থ না দেওয়ার কারণে এই তালিকাভুক্তির শিকার হয়।
কাদেরের সময়ে মোট ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার সড়ক অবকাঠামো বাজেটের মধ্যে ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে মাত্র ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কাদেরকে নিয়মিত কমিশন দিত এবং এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয় একটি প্রভাবশালী ‘কমিশন সিন্ডিকেট’। তার স্ত্রী ও আত্মীয়দের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট কার্যাদেশ প্রাপ্তিতে ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনেক সময় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাড়িয়ে ব্যয় দেখানো হতো। বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সড়ক খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের ব্যাপারটি আন্তর্জাতিকভাবেও চিহ্নিত হয়েছে। ভারত ও ইউরোপের তুলনায় বাংলাদেশে চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি।
ডিপিপি অনুমোদনের পেছনেও ছিল অসাধু লেনদেন। একাধিক প্রকল্পে ডিপিপি মাত্র ২৪ ঘণ্টায় অনুমোদন পায়, যা অনিয়মের প্রমাণ। প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের সময় সওজ কর্মকর্তারা ঘুষ দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে তদবির চালাতেন। প্রকল্প পরিচালকের নিয়োগেও ছিল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। কোনো কোনো প্রকৌশলীকে একসঙ্গে ১২টি প্রকল্পের পরিচালক করে কমিশন আদায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা হতো।
অনিয়ম এতটাই প্রাতিষ্ঠানিক ছিল যে ডিপিপি তৈরির সময় থেকেই ঠিক করা হতো কোন প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে, কোথায় কত টাকা সাশ্রয় দেখানো হবে, কোথায় অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হবে। কাগজে-কলমে লাভজনক দেখিয়ে প্রকল্প অনুমোদন আদায় করা হতো। প্রকৃতপক্ষে, কিছু প্রকল্পে যানবাহনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে, যেমন হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো।
সব মিলিয়ে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় রূপ নেয় একটি ‘কমিশন মেশিন’-এ। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে যে নীতিকথার মোড়কে দুর্নীতির এক নতুন মডেল তৈরি হয়েছিল, তা আজও দুর্নীতির প্রতীক হয়ে আছে।