ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১২ সিটিতে ভোটের চিন্তা সরকারের, শিগগির ঘোষণা আসতে পারে

মোঃ হাছানুর ইমাম জুয়েল
  • আপডেট সময় : ১২:১৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / 49

নির্বাচন কমিশন

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নতুন করে ভাবনা চলছে সরকারের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিক সেবা সচল রাখতে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন জরুরি মনে করা হচ্ছে। এছাড়া এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি ‘ট্রায়াল রান’ করার সুযোগও তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন—এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি জাতীয় নির্বাচন আগে চায়, আর জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা ঠিক হবে না। স্থানীয় সরকার সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজন করা বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের ১২টি সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। পরে আইন সংশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিয়মাবলী পরিবর্তন করা হয়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯ আগস্ট সব সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপির শাহাদাত হোসেন মেয়র পদে ফিরেছেন, আর ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির ইশরাক হোসেনের শপথ এখনও হয়নি।

আইনের ৩৪ (১) (খ) ও (গ) ধারায় সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ বা গঠন বাতিলের পর ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন বাধ্যতামূলক।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামে ২০২০ সালের ২৯ মার্চ, নারায়ণগঞ্জে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি, কুমিল্লায় ২০২২ সালের ১৫ জুন, রংপুরে ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর, গাজীপুরে ২০২৩ সালের ২৫ মে, খুলনা ও বরিশালে ২০২৩ সালের ১২ জুন, রাজশাহী ও সিলেটে ২০২৩ সালের ২১ জুন এবং ময়মনসিংহে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ভোট হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “জাতীয় নির্বাচন পেছানো সম্ভব নয়, তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রয়োজন। নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে।”

সর্বশেষ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার বিএনপিকে জানাবে যে, ইশরাক যদি বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করেন, তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পথে এগোবে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “সরকার যদি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়, নির্বাচন কমিশন তা বাস্তবায়ন করবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “আমরা আগে জাতীয় নির্বাচন চাই, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রয়োজন দেখি না।”

জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই, তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আগে হতে পারে।”

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমস্যা কমবে, তাই দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করানো উচিত।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বহুদিন ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়ার দাবি করছি।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, “সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।”

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, “কোন নির্বাচন আগে হবে তা সরকার সিদ্ধান্ত নিক।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে প্রশাসনের সক্ষমতা যাচাই করা যাবে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বিচ্ছিন্নভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভুল হবে। সংস্কার করে নির্বাচন করা উচিত, যা এক মাসে সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “একসঙ্গে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাই উত্তম, এতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সহজ হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

১২ সিটিতে ভোটের চিন্তা সরকারের, শিগগির ঘোষণা আসতে পারে

আপডেট সময় : ১২:১৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নতুন করে ভাবনা চলছে সরকারের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিক সেবা সচল রাখতে এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন জরুরি মনে করা হচ্ছে। এছাড়া এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি ‘ট্রায়াল রান’ করার সুযোগও তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন—এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি জাতীয় নির্বাচন আগে চায়, আর জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা ঠিক হবে না। স্থানীয় সরকার সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজন করা বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে এবং এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের ১২টি সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। পরে আইন সংশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিয়মাবলী পরিবর্তন করা হয়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯ আগস্ট সব সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপির শাহাদাত হোসেন মেয়র পদে ফিরেছেন, আর ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির ইশরাক হোসেনের শপথ এখনও হয়নি।

আইনের ৩৪ (১) (খ) ও (গ) ধারায় সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ বা গঠন বাতিলের পর ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন বাধ্যতামূলক।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামে ২০২০ সালের ২৯ মার্চ, নারায়ণগঞ্জে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি, কুমিল্লায় ২০২২ সালের ১৫ জুন, রংপুরে ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর, গাজীপুরে ২০২৩ সালের ২৫ মে, খুলনা ও বরিশালে ২০২৩ সালের ১২ জুন, রাজশাহী ও সিলেটে ২০২৩ সালের ২১ জুন এবং ময়মনসিংহে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ভোট হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “জাতীয় নির্বাচন পেছানো সম্ভব নয়, তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনও প্রয়োজন। নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে।”

সর্বশেষ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার বিএনপিকে জানাবে যে, ইশরাক যদি বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করেন, তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পথে এগোবে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “সরকার যদি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়, নির্বাচন কমিশন তা বাস্তবায়ন করবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “আমরা আগে জাতীয় নির্বাচন চাই, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রয়োজন দেখি না।”

জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই, তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও আগে হতে পারে।”

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমস্যা কমবে, তাই দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করানো উচিত।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বহুদিন ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়ার দাবি করছি।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, “সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।”

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, “কোন নির্বাচন আগে হবে তা সরকার সিদ্ধান্ত নিক।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে প্রশাসনের সক্ষমতা যাচাই করা যাবে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বলেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বিচ্ছিন্নভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভুল হবে। সংস্কার করে নির্বাচন করা উচিত, যা এক মাসে সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “একসঙ্গে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাই উত্তম, এতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সহজ হবে।”