ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা গুড়িয়ে দিল ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • / 68

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা গুড়িয়ে দিল ইরান

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনায়। শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা চালানোর পর, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলের বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তত ২৪ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়।

ইরানের দাবি অনুযায়ী, তারা ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র ও মোসাদের একটি পরিকল্পনা কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বলয়ের মাঝেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে তেল আবিবের মতো কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম হলো?

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা: কতটা শক্তিশালী?
ইসরায়েল একাধিক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে—এর মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম: স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত ,কার্যকারিতা প্রায় ৯০ শতাংশ। ডেভিড’স স্লিং মাঝারি থেকে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত, বারাক-৮ ও থাড হচ্ছে মাঝারি ও উচ্চপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম। অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ধ্বংসে ব্যবহৃত করে ইসরায়েল।

এছাড়া ইসরায়েলের রয়েছে, এয়ার-টু-এয়ার ডিফেন্স যার মাধ্যমে ড্রোন প্রতিহত করতে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।

ইসরায়েলে ইরানের হামলা
ইসরায়েলে ইরানের হামলা

ইরান কীভাবে প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান কয়েকটি কৌশলগত উপায়ে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সংখ্যায় চাপ সৃষ্টি করা। একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিঃশেষ করার চেষ্টা।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ‘ফাত্তাহ-২’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত ও অনিয়মিত গতির কারণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছে ইরান।

ক্রুজ মিসাইলের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে ‘হোভেইজাহ’ জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিচু উচ্চতায় গোপনে উড়ে এসে আঘাত হানে ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে।

ডিকয় হামলার মাধ্যমে আসল হামলার আগেই রাডার বিভ্রান্ত করতে ভুয়া সংকেত বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।

এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা সিস্টেম ৮০-৯০ শতাংশ সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু এই হিসাব অনুযায়ীও বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সুযোগ পেয়েছে। বিশেষ করে তেল আবিবের সামরিক সদরদপ্তর ‘কিরিয়া’তে হামলা ও আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি প্রমাণ করে—সবকিছু ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত এখন ‘প্রলম্বিত ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধের’ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। একদিকে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে বিমান পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে ইরান প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। উভয় দেশের অস্ত্র মজুত ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্থায়িত্ব এখন বড় প্রশ্ন।

বিশেষ করে যখন প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের হাতে কত ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ আছে? এবং ইরানের হাতে কী পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র আছে দীর্ঘ মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা গুড়িয়ে দিল ইরান

আপডেট সময় : ১০:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনায়। শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা চালানোর পর, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালায়। এতে ইসরায়েলের বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তত ২৪ জন নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়।

ইরানের দাবি অনুযায়ী, তারা ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র ও মোসাদের একটি পরিকল্পনা কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে। গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বলয়ের মাঝেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে তেল আবিবের মতো কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম হলো?

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা: কতটা শক্তিশালী?
ইসরায়েল একাধিক স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে—এর মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম: স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত ,কার্যকারিতা প্রায় ৯০ শতাংশ। ডেভিড’স স্লিং মাঝারি থেকে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত, বারাক-৮ ও থাড হচ্ছে মাঝারি ও উচ্চপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম। অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও ধ্বংসে ব্যবহৃত করে ইসরায়েল।

এছাড়া ইসরায়েলের রয়েছে, এয়ার-টু-এয়ার ডিফেন্স যার মাধ্যমে ড্রোন প্রতিহত করতে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।

ইসরায়েলে ইরানের হামলা
ইসরায়েলে ইরানের হামলা

ইরান কীভাবে প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করল?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান কয়েকটি কৌশলগত উপায়ে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সংখ্যায় চাপ সৃষ্টি করা। একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিঃশেষ করার চেষ্টা।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ‘ফাত্তাহ-২’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত ও অনিয়মিত গতির কারণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছে ইরান।

ক্রুজ মিসাইলের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে ‘হোভেইজাহ’ জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিচু উচ্চতায় গোপনে উড়ে এসে আঘাত হানে ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে।

ডিকয় হামলার মাধ্যমে আসল হামলার আগেই রাডার বিভ্রান্ত করতে ভুয়া সংকেত বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।

এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা সিস্টেম ৮০-৯০ শতাংশ সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু এই হিসাব অনুযায়ীও বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সুযোগ পেয়েছে। বিশেষ করে তেল আবিবের সামরিক সদরদপ্তর ‘কিরিয়া’তে হামলা ও আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি প্রমাণ করে—সবকিছু ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত এখন ‘প্রলম্বিত ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধের’ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। একদিকে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে বিমান পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে ইরান প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। উভয় দেশের অস্ত্র মজুত ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার স্থায়িত্ব এখন বড় প্রশ্ন।

বিশেষ করে যখন প্রশ্ন উঠছে—ইসরায়েলের হাতে কত ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ আছে? এবং ইরানের হাতে কী পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র আছে দীর্ঘ মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার?