লন্ডনে বৈঠকে ড. ইউনূস–তারেক রহমান

- আপডেট সময় : ০২:৫৫:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / 41

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) লন্ডনের পার্ক লেনের হোটেল ডোরচেস্টারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় বৈঠকে যোগ দিতে বাসা থেকে রওনা হন তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপি ও সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন আলোচনায় আসে। অন্যদিকে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে গুরুত্ব পায় নির্বাচনের সময়, রোডম্যাপ এবং প্রশাসন-সংক্রান্ত বিষয়াদি। তবে উভয় পক্ষই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার একটি সূত্র জানায়, আলোচ্যসূচি নির্ধারণের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধির সঙ্গে তারেক রহমানের প্রতিনিধি দলের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা আগেই হয়েছে। গত বুধবার এ আলোচনা হয় এবং গতকাল বৃহস্পতিবারও তারেক রহমানের একজন প্রতিনিধি সরকারের সংশ্লিষ্ট এক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন বলে এক ভিডিও বার্তায় জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা, বিচার ও সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আলাপ হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। সরকার ও বিএনপির মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
চার দিনের সফরে বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। সেখান থেকেই তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত সোমবার সরকার ও বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এই বৈঠক ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “বৈঠকটি যেহেতু শীর্ষ পর্যায়ে হচ্ছে, সেহেতু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই আলোচনায় আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার ও প্রশাসনে এখনো যারা স্বৈরাচারের সহচর, তাদের অবস্থানের বিষয়টি উঠবে আলোচনায়। আইনের শাসন, আদালতের রায় মেনে চলার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হবে। সংস্কার সংক্রান্ত আলোচনাও হবে।”
সালাহউদ্দিন আহমদ আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি, এই শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে। এটি আমাদের এবং জাতিরও প্রত্যাশা।”
গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে কোন বিষয়গুলোতে আলোচনা হবে, সে দায়িত্ব পুরোপুরি তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়।
ঈদুল আজহার আগের দিন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করে। তবে বিএনপি এটিকে যৌক্তিক মনে করছে না। দলটি মনে করে, চলতি বছরের ডিসেম্বরই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। তবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে—অর্থাৎ রমজানের আগেই—নির্বাচন হলে তাতে দলের আপত্তি থাকবে না বলে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাই বৈঠকে তারেক রহমানের মূল ফোকাস ছিল নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার বিষয়েই।
দেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষা তৈরি হয়েছে। তার আইনজীবীদের দাবি, তিনি সব মামলায় খালাস পেয়েছেন। গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “তারেক রহমানের দেশে আসতে কোনো সমস্যা নেই।”
ফলে এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনা আরও গভীর হয়েছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে জনমনে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক বলেন, “বৈঠক ঘিরে লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও রয়েছে প্রবল কৌতূহল। আজ স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই হোটেল ডোরচেস্টারের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়েছেন।”