ভারতের আকাশে বহুবার নেমে এসেছে মৃত্যুর ছায়া

- আপডেট সময় : ১২:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / 48

ভারতের আকাশে বহুবার নেমে এসেছে মৃত্যুর ছায়া। কখনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি, কখনও মানবিক ভুল—আরও কখনও প্রাকৃতিক বৈরিতার মুখে পড়েছে যাত্রীবাহী বিমান। এই দুর্ঘটনাগুলো শুধু সংখ্যার খতিয়ান নয়, বরং ভাঙা স্বপ্ন, শোকাহত পরিবার এবং প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পাঁচটি বিমান দুর্ঘটনার সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
১. আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা (১২ জুন ২০২৫)
এক মুহূর্তে শেষ ২৪২ জীবন ও অসংখ্য ভবিষ্যৎ
লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ফ্লাইট এআই ১৭১ আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের পরপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে শহরের একটি মেডিকেল হোস্টেলের ওপর। ২২৭ যাত্রী ও ১৫ ক্রু—মোট ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২০৪ জন নিহত হন। হোস্টেলেও আহত হন বহু মেডিকেল শিক্ষার্থী। ইঞ্জিনে আগুন লাগার পর পাইলট জরুরি অবতরণের চেষ্টা করলেও সময় ছিল না। এক বিভীষিকাময় বিকেলে ভারত হারায় শতাধিক জীবন ও আত্মা।
২. কোঝিকোড বিমান দুর্ঘটনা (৭ আগস্ট ২০২০)
‘ভান্দে ভারত’ মিশনের শেষ অবতরণ হয়ে উঠল মৃত্যুপুরী
দুবাই ফেরত ফ্লাইট আইএক্স ১৩৪৪ কোঝিকোডের ‘টেবিলটপ’ রানওয়েতে ভারী বৃষ্টির মধ্যে অবতরণ করতে গিয়ে ৩৫ ফুট গভীর খাদে পড়ে। ১৯০ আরোহীর মধ্যে ২১ জন নিহত হন, পাইলট-সহ। ১২৩ জন আহত হন। তদন্তে উঠে আসে পাইলটদের ভুল সিদ্ধান্ত ও রানওয়ের পানির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
৩. ম্যাঙ্গালোর বিমান দুর্ঘটনা (২২ মে ২০১০)
টেবিলটপ রানওয়ের সীমাবদ্ধতা ও ক্লান্ত পাইলটের ভয়াল সিদ্ধান্ত
দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ৮১২ ম্যাঙ্গালোরে অবতরণ করতে গিয়ে রানওয়ে ছাড়িয়ে ২০০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে ১৫৮ জন নিহত হন। মাত্র ৮ জন অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। ককপিট রেকর্ডার থেকে জানা যায়, পাইলট অবতরণের সময় ক্লান্ত ছিলেন এবং প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেছিলেন।
৪. পাটনা বিমান দুর্ঘটনা (১৭ জুলাই ২০০০)
নিচে থাকা পরিবারগুলোর জন্যও মৃত্যু নামিয়ে আনে আকাশ থেকে
কলকাতা থেকে দিল্লিগামী ফ্লাইট ৭৪১২ অবতরণকালে পাটনার গার্ডেন রোড এলাকার ঘনবসতিতে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৫৫ জন ও নিচে থাকা ১০ জন—মোট ৬৫ জন প্রাণ হারান। ইঞ্জিন বিকল হয়ে পাইলট পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। দুর্ঘটনার পর গোটা শহর কেঁপে ওঠে শোকের ছায়ায়।
৫. চারখি দাদরি মাঝ-আকাশ সংঘর্ষ (১২ নভেম্বর ১৯৯৬)
বিশ্বের ইতিহাসেও অন্যতম ভয়াল দুর্ঘটনা
কাজাখস্তান ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের দুটি যাত্রীবাহী বিমান দিল্লির আকাশে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায়। ৩৪৯ জন আরোহীর কেউই বাঁচেননি। ভুল নির্দেশনা, ভাষাগত সমস্যায় পাইলটরা ভুল উচ্চতায় চলে আসেন এবং সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে ট্রাফিক সংঘর্ষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ( টিসিএএস) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
এই দুর্ঘটনাগুলো শুধু একেকটি ঘটনার বিবরণ নয়—প্রতিটিই একটি করে সংকেত। আকাশে উড়তে চাওয়া মানুষের জীবন যেন আর এভাবে থেমে না যায়, সেজন্য প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও প্রোটোকলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি ওঠে প্রতিবার।