ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে ইউনূস-তারেক

সিনিয়র প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • / 70

ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে ইউনূস-তারেক

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজ, শুক্রবার (১৩ জুন), লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বিগ বেনের ছায়ায় ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে বসতে চলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বৈঠক শুধু দুই রাজনীতিকের মধ্যে কথোপকথন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি সম্ভাব্য জাতীয় মোড় পরিবর্তনের সূচনা বিন্দু।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা এবং উত্তেজনা চরমে, তখন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা জাতি। রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টক শো থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ—সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা। অনেকে বলছেন, এই বৈঠক অচলাবস্থা ভাঙতে পারে, আবার কেউ কেউ দেখছেন এটিকে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার সূচনা হিসেবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই সাক্ষাৎকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এটি একটি মোক্ষম মুহূর্ত। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তাঁর ভাষায়, “এই বৈঠক নির্বাচনের ধোঁয়াশা কাটাতে সহায়ক হবে।”

গত কয়েক মাস ধরেই বিএনপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই চায় বলে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সময়সূচি নিয়ে বারবার ভিন্ন বার্তা এসেছে—কখনো ডিসেম্বর, কখনো জুন, আবার কখনো তারও পরে। এর মাঝে ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নির্বাচন এপ্রিল মাসে আয়োজনের ঘোষণা দিলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ ও বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনের আলোচিত বৈঠকটি পরিণত হয়েছে এক ‘মহা প্রত্যাশার মুহূর্তে’। আলোচনার পর দেশে ফিরবেন কি তারেক রহমান? বিএনপি কি তাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নেবে? নির্বাচন হবে এপ্রিলেই, না কি একটি আপসের ভিত্তিতে নতুন তারিখ নির্ধারিত হবে? এসব প্রশ্ন এখন জ্বলন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই বৈঠক নিছক নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং একটি বিস্তৃত জাতীয় সমঝোতার রূপরেখা তৈরি হওয়ার ইঙ্গিতও মিলতে পারে। রাজনীতির চরিত্রই এমন—এখানে স্থায়ীত্ব নেই, সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায় সমীকরণ, তৈরি হয় নতুন জোট ও বাস্তবতা।

ইতিমধ্যে কিছু গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যা বর্তমান সরকার ও বিএনপির মধ্যে আপসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের সমঝোতা বাস্তবায়িত হলে, সেটি নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

লন্ডনের বিগ বেন যেমন সময়ের প্রতীক, তেমনি এই বৈঠকও হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সময়চক্রের এক মোড় পরিবর্তনের দিশারি। এখন দেখার বিষয়, এই বৈঠকের মাধ্যমে জাতি কোন পথে যাত্রা শুরু করে—সমঝোতার দিকে, না কি সংঘাতের নতুন অধ্যায়ের দিকে।

সময় চলছে, রাজনীতি গড়াচ্ছে—গোটা দেশের চোখ এখন বিগ বেনের কাঁটার দিকে। সেখান থেকেই হয়তো নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের আগামী রাজনৈতিক মানচিত্র।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে ইউনূস-তারেক

আপডেট সময় : ১২:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজ, শুক্রবার (১৩ জুন), লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বিগ বেনের ছায়ায় ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে বসতে চলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বৈঠক শুধু দুই রাজনীতিকের মধ্যে কথোপকথন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি সম্ভাব্য জাতীয় মোড় পরিবর্তনের সূচনা বিন্দু।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা এবং উত্তেজনা চরমে, তখন এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা জাতি। রাজপথ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টক শো থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ—সর্বত্র চলছে জল্পনা-কল্পনা। অনেকে বলছেন, এই বৈঠক অচলাবস্থা ভাঙতে পারে, আবার কেউ কেউ দেখছেন এটিকে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার সূচনা হিসেবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই সাক্ষাৎকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এটি একটি মোক্ষম মুহূর্ত। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তাঁর ভাষায়, “এই বৈঠক নির্বাচনের ধোঁয়াশা কাটাতে সহায়ক হবে।”

গত কয়েক মাস ধরেই বিএনপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই চায় বলে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সময়সূচি নিয়ে বারবার ভিন্ন বার্তা এসেছে—কখনো ডিসেম্বর, কখনো জুন, আবার কখনো তারও পরে। এর মাঝে ঈদুল আজহার আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নির্বাচন এপ্রিল মাসে আয়োজনের ঘোষণা দিলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অসন্তোষ ও বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনের আলোচিত বৈঠকটি পরিণত হয়েছে এক ‘মহা প্রত্যাশার মুহূর্তে’। আলোচনার পর দেশে ফিরবেন কি তারেক রহমান? বিএনপি কি তাদের পূর্বঘোষিত অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচনে অংশ নেবে? নির্বাচন হবে এপ্রিলেই, না কি একটি আপসের ভিত্তিতে নতুন তারিখ নির্ধারিত হবে? এসব প্রশ্ন এখন জ্বলন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই বৈঠক নিছক নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং একটি বিস্তৃত জাতীয় সমঝোতার রূপরেখা তৈরি হওয়ার ইঙ্গিতও মিলতে পারে। রাজনীতির চরিত্রই এমন—এখানে স্থায়ীত্ব নেই, সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায় সমীকরণ, তৈরি হয় নতুন জোট ও বাস্তবতা।

ইতিমধ্যে কিছু গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যা বর্তমান সরকার ও বিএনপির মধ্যে আপসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের সমঝোতা বাস্তবায়িত হলে, সেটি নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

লন্ডনের বিগ বেন যেমন সময়ের প্রতীক, তেমনি এই বৈঠকও হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সময়চক্রের এক মোড় পরিবর্তনের দিশারি। এখন দেখার বিষয়, এই বৈঠকের মাধ্যমে জাতি কোন পথে যাত্রা শুরু করে—সমঝোতার দিকে, না কি সংঘাতের নতুন অধ্যায়ের দিকে।

সময় চলছে, রাজনীতি গড়াচ্ছে—গোটা দেশের চোখ এখন বিগ বেনের কাঁটার দিকে। সেখান থেকেই হয়তো নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের আগামী রাজনৈতিক মানচিত্র।