ঢাকা ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুধু জয় নয়, আত্মার প্রত্যাবর্তন: হামজা-সোহেলের জোড়া কাব্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • / 47

শুধু জয় নয়, আত্মার প্রত্যাবর্তন: হামজা-সোহেলের জোড়া কাব্য

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও প্রাণ ফিরে পেল জাতীয় স্টেডিয়াম। দর্শকদের গর্জন, পতাকার ঢেউ আর বাংলার জয়োল্লাসে মুখরিত হল গ্যালারি—আর সেই উত্তাপেই জেগে উঠল বাংলাদেশ ফুটবল।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের রঙ মেখে লেস্টার সিটির তারকা হামজা চৌধুরী আর অভিজ্ঞ সেনানায়ক সোহেল রানা রাঙালেন গোলের মালা, ভুটানকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেখিয়ে দিলেন—বাংলাদেশ ফুটবল এখন কেবল ইতিহাস নয়, সম্ভাবনারও নাম।

হামজার মাথায় ভেসে ওঠা আশা
ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিটেই শুরু হয় রূপকথা। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার কিক থেকে দারুণ টাইমিংয়ে ভেসে উঠে গোল করেন হামজা। এটি জাতীয় দলের হয়ে তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচ এবং প্রথম গোল, তাও জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারিভর্তি সমর্থকদের সামনে। হাজারো গলা তখন এক সুরে চিৎকার করে উঠল:
“বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!”

সোহেলের শটে কাব্যিক ধ্বনি
প্রথমার্ধে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়, বিশেষ করে ফাহমিদুল ও জামালের প্রচেষ্টা ভুটানের গোলরক্ষক জিয়েলশেন জাংপো ঠেকিয়ে দেন। তবে বিরতির পরে মাঠে নেমে আবারও খেলায় আগুন ছড়িয়ে দেন বাংলার যোদ্ধারা।

৪৯ মিনিটে, বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার বাম পায়ের বজ্রপাতে কাঁপে ভুটানের গোলবার। চোখ ধাঁধানো সেই শটে ছিল অপ্রতিরোধ্য গতি আর নিখুঁত দিকনির্দেশনা—জাংপো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি।

রক্ষা কবচে মিতুল
ভুটান হাল না ছেড়ে পাল্টা আক্রমণে যায়। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত সেভ করেন তরুণ গোলরক্ষক মিতুল মারমা, ৭৭ মিনিটে জাংপোর হেড অল্পের জন্য বাইরে যায়। তবে শেষ মুহূর্তে ইব্রাহিমের শট ঠেকিয়ে দেন জাংপো এবং যোগ করা সময়ে জিগমে নামগিয়ালের নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন মিতুল—সেই ছিল বাংলাদেশের জয় সুরক্ষার শেষ পর্দা।

শুধু জয় নয়, আত্মার প্রত্যাবর্তন
শেষ বাঁশি বাজতেই স্কোরবোর্ডে লেখা ছিল: বাংলাদেশ ২ – ভুটান ০
কিন্তু ফলাফলের চেয়েও বড় ছিল মাঠের বার্তা—ফিরে এসেছে সেই হারানো আত্মা, সেই হারিয়ে যাওয়া ফুটবল আবেগ।

এই জয় জামালের নেতৃত্বে প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা, হামজার অভিষেকের স্বপ্নপূরণ, আর সোহেলের অভিজ্ঞতায় ফুটবলের রেনেসাঁ। জাতীয় স্টেডিয়াম যেন আবারও ফুটবল ভালোবাসার মঞ্চ হয়ে উঠল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শুধু জয় নয়, আত্মার প্রত্যাবর্তন: হামজা-সোহেলের জোড়া কাব্য

আপডেট সময় : ১২:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও প্রাণ ফিরে পেল জাতীয় স্টেডিয়াম। দর্শকদের গর্জন, পতাকার ঢেউ আর বাংলার জয়োল্লাসে মুখরিত হল গ্যালারি—আর সেই উত্তাপেই জেগে উঠল বাংলাদেশ ফুটবল।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের রঙ মেখে লেস্টার সিটির তারকা হামজা চৌধুরী আর অভিজ্ঞ সেনানায়ক সোহেল রানা রাঙালেন গোলের মালা, ভুটানকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেখিয়ে দিলেন—বাংলাদেশ ফুটবল এখন কেবল ইতিহাস নয়, সম্ভাবনারও নাম।

হামজার মাথায় ভেসে ওঠা আশা
ম্যাচের মাত্র ৬ মিনিটেই শুরু হয় রূপকথা। জামাল ভূঁইয়ার কর্নার কিক থেকে দারুণ টাইমিংয়ে ভেসে উঠে গোল করেন হামজা। এটি জাতীয় দলের হয়ে তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচ এবং প্রথম গোল, তাও জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারিভর্তি সমর্থকদের সামনে। হাজারো গলা তখন এক সুরে চিৎকার করে উঠল:
“বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!”

সোহেলের শটে কাব্যিক ধ্বনি
প্রথমার্ধে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়, বিশেষ করে ফাহমিদুল ও জামালের প্রচেষ্টা ভুটানের গোলরক্ষক জিয়েলশেন জাংপো ঠেকিয়ে দেন। তবে বিরতির পরে মাঠে নেমে আবারও খেলায় আগুন ছড়িয়ে দেন বাংলার যোদ্ধারা।

৪৯ মিনিটে, বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার বাম পায়ের বজ্রপাতে কাঁপে ভুটানের গোলবার। চোখ ধাঁধানো সেই শটে ছিল অপ্রতিরোধ্য গতি আর নিখুঁত দিকনির্দেশনা—জাংপো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারেননি।

রক্ষা কবচে মিতুল
ভুটান হাল না ছেড়ে পাল্টা আক্রমণে যায়। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত সেভ করেন তরুণ গোলরক্ষক মিতুল মারমা, ৭৭ মিনিটে জাংপোর হেড অল্পের জন্য বাইরে যায়। তবে শেষ মুহূর্তে ইব্রাহিমের শট ঠেকিয়ে দেন জাংপো এবং যোগ করা সময়ে জিগমে নামগিয়ালের নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন মিতুল—সেই ছিল বাংলাদেশের জয় সুরক্ষার শেষ পর্দা।

শুধু জয় নয়, আত্মার প্রত্যাবর্তন
শেষ বাঁশি বাজতেই স্কোরবোর্ডে লেখা ছিল: বাংলাদেশ ২ – ভুটান ০
কিন্তু ফলাফলের চেয়েও বড় ছিল মাঠের বার্তা—ফিরে এসেছে সেই হারানো আত্মা, সেই হারিয়ে যাওয়া ফুটবল আবেগ।

এই জয় জামালের নেতৃত্বে প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা, হামজার অভিষেকের স্বপ্নপূরণ, আর সোহেলের অভিজ্ঞতায় ফুটবলের রেনেসাঁ। জাতীয় স্টেডিয়াম যেন আবারও ফুটবল ভালোবাসার মঞ্চ হয়ে উঠল।