ঢাকা ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রবল বর্ষণে ঝুঁকিতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / 43

প্রবল বর্ষণে ঝুঁকিতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উখিয়া আশ্রয়শিবিরের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ের ঢালুতে অতিঝুঁকিতে বসবাস করছে তারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের শেডগুলোতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানি। নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত, যা রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরই মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক শিশু। বজ্রপাতে আহত হয়েছে একই পরিবারের ৫ সদস্য।

নিহতের নাম মোহাম্মদ আয়াছ (২০)। সে ক্যাম্প-২ ইস্ট ডি-৩ ব্লকের বাসিন্দা, আবুল ফয়েজের ছেলে। আহত শিশুর নাম কামাল উদ্দিন (১২)। সে একই ব্লকের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। নিহত আয়াছ তার বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিল।

সোমবার (০২ জুন) দিবাগত রাতে উখিয়া ২ ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকে নিজের শেল্টারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শিবিরে নিজেদের তৈরি মাটির দেয়াল হঠাৎ বসতঘরে ধসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আয়াছ ও কামাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশেপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত তাদের বিডিআরসিএস-পিএইচসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কামাল উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠলেও মোহাম্মদ আয়াছকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

রোহিঙ্গারা জানান, হতাহত দুইজনই মোহাম্মদ আয়াছের বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছিল। তারা সম্প্রতি আগত একটি পরিবারের সদস্য, যারা এখনো নিবন্ধন ইউনিট থেকে বায়োমেট্রিক কার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি।

উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেয়াল চাপা পড়ে মোহাম্মদ আয়াছ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কামাল উদ্দিন নামের ১২ বছর বয়সী এক শিশু। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।

রবিবার রাত ৯ টার দিকে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮ এর একই পরিবারের ৫ জন। তারা হলেন আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)।

বজ্রপাতে আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ২০ নম্বর ক্যাম্পস্থ এনজিও সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ পরিচালিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। দেয়াল চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে এক শিশু এবং বজ্রপাতে আহত হয়েছে ৫ জন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পগুলোতে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্ষাকাল শুরু হতেই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল, বন্যা ও বজ্রপাতের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রবল বর্ষণে ঝুঁকিতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা

আপডেট সময় : ০৮:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উখিয়া আশ্রয়শিবিরের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ের ঢালুতে অতিঝুঁকিতে বসবাস করছে তারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের শেডগুলোতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানি। নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত, যা রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরই মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক শিশু। বজ্রপাতে আহত হয়েছে একই পরিবারের ৫ সদস্য।

নিহতের নাম মোহাম্মদ আয়াছ (২০)। সে ক্যাম্প-২ ইস্ট ডি-৩ ব্লকের বাসিন্দা, আবুল ফয়েজের ছেলে। আহত শিশুর নাম কামাল উদ্দিন (১২)। সে একই ব্লকের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। নিহত আয়াছ তার বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিল।

সোমবার (০২ জুন) দিবাগত রাতে উখিয়া ২ ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকে নিজের শেল্টারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শিবিরে নিজেদের তৈরি মাটির দেয়াল হঠাৎ বসতঘরে ধসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আয়াছ ও কামাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশেপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত তাদের বিডিআরসিএস-পিএইচসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কামাল উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠলেও মোহাম্মদ আয়াছকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

রোহিঙ্গারা জানান, হতাহত দুইজনই মোহাম্মদ আয়াছের বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছিল। তারা সম্প্রতি আগত একটি পরিবারের সদস্য, যারা এখনো নিবন্ধন ইউনিট থেকে বায়োমেট্রিক কার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি।

উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেয়াল চাপা পড়ে মোহাম্মদ আয়াছ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কামাল উদ্দিন নামের ১২ বছর বয়সী এক শিশু। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।

রবিবার রাত ৯ টার দিকে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮ এর একই পরিবারের ৫ জন। তারা হলেন আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)।

বজ্রপাতে আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ২০ নম্বর ক্যাম্পস্থ এনজিও সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ পরিচালিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। দেয়াল চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে এক শিশু এবং বজ্রপাতে আহত হয়েছে ৫ জন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পগুলোতে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্ষাকাল শুরু হতেই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল, বন্যা ও বজ্রপাতের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।