ঢাকা ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিবাদে নারী-শিশুসহ আহত ৪

অপরাধীদের দখলে মোংলার নারিকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / 472

অপরাধীদের দখলে মোংলার নারিকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের নারিকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন যেন একটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ৮-১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই চক্রটি একসময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গাঁজা, ইয়াবাসহ মাদক সেবন ও বেচাকেনা। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, তেমনি ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ইতোমধ্যে এ অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় হাজারো পরিবার বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে মো. আলাউদ্দিনকে সভাপতি ও আলমগীর হোসেনকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল আশ্রয়ণের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও বাসিন্দাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ কমিটি নিজেরাই সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে চাঁদাবাজি, মারধর, জমি ও ঘের দখল, মাছ লুটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়।

গত ৫ আগস্টের পর এই চক্রটি বেশ কয়েকটি চিংড়িঘের জোরপূর্বক দখল করে নেয়। ঘেরের মাছ বিক্রির টাকার হিসাব চাইলে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়া হয়। রবিবার বিকেলে হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ জানানোয় মুন্নি বেগম নামে স্বামী পরিত্যক্ত এক নারীকে রাতেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে আলাউদ্দিন, আলমগীর মল্লিক, ধনু মান্নান, ছালমা বেগম, শফি শেখ, মো. রাকিব মাতুব্বর ও মিজান মাতুব্বর। মুন্নির সঙ্গে থাকা দুটি শিশুকে মারধর করায় তারাও আহত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, আশ্রয়ণের চারটি পুকুরের মাছ দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে এ চক্রটি নিজেরা চাষ করে আত্মসাৎ করছে। বাসিন্দাদের জন্য নির্ধারিত সুপেয় পানির ব্যবস্থাও তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভোগ করছে। মাদক বেচাকেনা ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে তারা পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

মুন্নি বেগম ও ভ্যানচালক ওমর ফারুক থানাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে একাধিকবার অভিযোগ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, “নারিকেলতলা আশ্রয়ণে বসবাসরত জনগণের বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে এক নারী ও দুটি শিশুর উপর হামলার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিবাদে নারী-শিশুসহ আহত ৪

অপরাধীদের দখলে মোংলার নারিকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের নারিকেলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন যেন একটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ৮-১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই চক্রটি একসময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকলেও বর্তমানে ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গাঁজা, ইয়াবাসহ মাদক সেবন ও বেচাকেনা। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, তেমনি ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ইতোমধ্যে এ অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় হাজারো পরিবার বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে মো. আলাউদ্দিনকে সভাপতি ও আলমগীর হোসেনকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির দায়িত্ব ছিল আশ্রয়ণের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও বাসিন্দাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ কমিটি নিজেরাই সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে চাঁদাবাজি, মারধর, জমি ও ঘের দখল, মাছ লুটসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়।

গত ৫ আগস্টের পর এই চক্রটি বেশ কয়েকটি চিংড়িঘের জোরপূর্বক দখল করে নেয়। ঘেরের মাছ বিক্রির টাকার হিসাব চাইলে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়া হয়। রবিবার বিকেলে হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ জানানোয় মুন্নি বেগম নামে স্বামী পরিত্যক্ত এক নারীকে রাতেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে আলাউদ্দিন, আলমগীর মল্লিক, ধনু মান্নান, ছালমা বেগম, শফি শেখ, মো. রাকিব মাতুব্বর ও মিজান মাতুব্বর। মুন্নির সঙ্গে থাকা দুটি শিশুকে মারধর করায় তারাও আহত হয়।

অভিযোগ রয়েছে, আশ্রয়ণের চারটি পুকুরের মাছ দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে এ চক্রটি নিজেরা চাষ করে আত্মসাৎ করছে। বাসিন্দাদের জন্য নির্ধারিত সুপেয় পানির ব্যবস্থাও তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ভোগ করছে। মাদক বেচাকেনা ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে তারা পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

মুন্নি বেগম ও ভ্যানচালক ওমর ফারুক থানাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে একাধিকবার অভিযোগ করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, “নারিকেলতলা আশ্রয়ণে বসবাসরত জনগণের বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে এক নারী ও দুটি শিশুর উপর হামলার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”