ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ 

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / 44

মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ 

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নৌ চ্যানেলের নাব্যতা বজায় রাখতে আবারও ড্রেজিং (খনন) কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি বড় বাণিজ্যিক জাহাজ সহজে ভিড়তে পারবে। ড্রেজিং শেষ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বন্দরের গতি বাড়বে বলে আশা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ ড্রেজিং প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোংলা সমুদ্রবন্দর প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। সে সময় আউটার ও ইনারবার চ্যানেলে ড্রেজিং না করায় চরম নাব্যসংকট দেখা দেয়, ফলে জাহাজ ভিড়তে পারত না বন্দরে। মাসের পর মাস বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

নাব্য সংকটের কারণে কনটেইনারবাহী ৯.৫০ মিটার গভীরতার জাহাজ মোংলায় ঢুকতে না পারায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেন। পরে ২০২০ সালে ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আউটারবারের ১৪ কিলোমিটার অংশে ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়, যার ফলে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখন সহজেই বন্দর ব্যবহার করতে পারছে।

মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ 
মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ

বর্তমানে মোংলা বন্দরের ১৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ চ্যানেলের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার নৌপথ পুনরায় খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলায় ভিড়তে পারবে, যা বন্দরের সক্ষমতা ও আকর্ষণ আরও বাড়াবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. জহিরুল হক বলেন, “নৌ চ্যানেল এই বন্দরের প্রাণ। এ চ্যানেলকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প এবং নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করছি।”

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, “দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাঁচিয়ে রাখতে পশুর চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে আমরা আউটারবারের ড্রেজিং সম্পন্ন করেছি এবং ২০২১ সালের ১৩ মার্চ থেকে ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার পশুর চ্যানেল সংরক্ষণ ড্রেজিং শুরু হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বছরজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক জাহাজ আগমন ও নির্গমনের ফলে বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলাকে আরও গতিশীল ও আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার কিছু ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে।”

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান মানিক এবং ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এবং বাণিজ্য সচল রাখতে নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং অত্যন্ত জরুরি। এ কাজ দ্রুত শুরু এবং ধারাবাহিকভাবে চালু রাখতে হবে, না হলে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বন্দর ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ 

আপডেট সময় : ০৭:১৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নৌ চ্যানেলের নাব্যতা বজায় রাখতে আবারও ড্রেজিং (খনন) কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে দেশি-বিদেশি বড় বাণিজ্যিক জাহাজ সহজে ভিড়তে পারবে। ড্রেজিং শেষ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বন্দরের গতি বাড়বে বলে আশা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ ড্রেজিং প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোংলা সমুদ্রবন্দর প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। সে সময় আউটার ও ইনারবার চ্যানেলে ড্রেজিং না করায় চরম নাব্যসংকট দেখা দেয়, ফলে জাহাজ ভিড়তে পারত না বন্দরে। মাসের পর মাস বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

নাব্য সংকটের কারণে কনটেইনারবাহী ৯.৫০ মিটার গভীরতার জাহাজ মোংলায় ঢুকতে না পারায় ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতেন। পরে ২০২০ সালে ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে আউটারবারের ১৪ কিলোমিটার অংশে ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়, যার ফলে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখন সহজেই বন্দর ব্যবহার করতে পারছে।

মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ 
মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেলের খনন কাজ

বর্তমানে মোংলা বন্দরের ১৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ চ্যানেলের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার নৌপথ পুনরায় খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলায় ভিড়তে পারবে, যা বন্দরের সক্ষমতা ও আকর্ষণ আরও বাড়াবে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রধান মো. জহিরুল হক বলেন, “নৌ চ্যানেল এই বন্দরের প্রাণ। এ চ্যানেলকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প এবং নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করছি।”

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, “দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাঁচিয়ে রাখতে পশুর চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে আমরা আউটারবারের ড্রেজিং সম্পন্ন করেছি এবং ২০২১ সালের ১৩ মার্চ থেকে ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার পশুর চ্যানেল সংরক্ষণ ড্রেজিং শুরু হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বছরজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক জাহাজ আগমন ও নির্গমনের ফলে বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। মোংলাকে আরও গতিশীল ও আধুনিক বন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যার কিছু ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে।”

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান মানিক এবং ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এবং বাণিজ্য সচল রাখতে নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং অত্যন্ত জরুরি। এ কাজ দ্রুত শুরু এবং ধারাবাহিকভাবে চালু রাখতে হবে, না হলে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বন্দর ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।”