বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
কিভাবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পাবে জামায়াত?

- আপডেট সময় : ০৬:০৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 45

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কে নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, দলীয় প্রতীক হিসেবে জামায়াতের ব্যবহৃত ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বরাদ্দের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করলেও ২০১৬ সালে ফুল কোর্ট সভার একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেওয়া হয়। এটি কোনো বিচারিক রায় ছিল না।
ফলে, নিবন্ধন পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে জামায়াত একটি পৃথক আবেদন করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের সংকট নতুন নয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের আগেও এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। যদিও সে সময় বিষয়টি আদালতে গড়ায়নি।
রোববার আপিল বিভাগ জামায়াতকে দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেয় নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র মতে, বর্তমানে ইসির প্রতীকের তালিকায় দাঁড়িপাল্লা নেই। ফলে জামায়াতকে এই প্রতীক ফিরিয়ে দিতে হলে আগে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধন আনতে হবে। এরপর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ভেটিং শেষে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে, যা একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আদালতের রায় অনুযায়ী আইন বা বিধি মোতাবেক আমরা পরবর্তী প্রক্রিয়া গ্রহণ করবো।”
যেভাবে জামায়াত হারায় দাঁড়িপাল্লা
১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দলীয় প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দের আবেদন করা হয়, যা নির্বাচন কমিশন মঞ্জুর করে। এরপরে তারা পরপর পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে এ প্রতীকেই অংশ নেয়।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রথা চালু করলে জামায়াত ইসলামীকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকই দেওয়া হয়।
কিন্তু ২০১৩ সালে এক রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করে।
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ইসিকে একটি চিঠি দিয়ে জানায়, দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি যেন কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে না দেওয়া হয়। সেই অনুসারে, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশ করে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত ছিল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, বিচারিক নয়। কিন্তু সেটার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দেয়।”
প্রতীক ফেরত আসতে পারে কীভাবে?
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে ও প্রতীক বরাদ্দের জন্য পুনরায় আবেদন করে। প্রতীক বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণও চাওয়া হয়।
শুনানি শেষে আপিল বিভাগ জামায়াতকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং প্রতীক বরাদ্দ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেয় নির্বাচন কমিশনকে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, “বিধিমালায় সংশোধন করে খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, সেখান থেকে ভেটিংয়ের পর গেজেট প্রকাশ করতে পারবে ইসি।”
তবে পুরো প্রক্রিয়াটি কতদিনে শেষ হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলেনি নির্বাচন কমিশন। তারা জানিয়েছে, আদালতের আদেশের সনদপ্রাপ্ত কপি পাওয়ার পরই তারা প্রক্রিয়া শুরু করবে।
নিবন্ধন বিতর্কের পেছনের ঘটনা
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। জামায়াত ওই বছরই আপিল করে, যা ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিলকারী উপস্থিত না থাকায় খারিজ হয়ে যায়।
এরপর জামায়াত আবার ‘ডিফল্ট মার্জনা’ চেয়ে আবেদন করে, যা ২০২3 সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ মঞ্জুর করে। এরপর শুনানি শেষে ২০২৫ সালের ১ জুন দলটির পক্ষে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি এবং এদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ৫০টি প্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য আছে আরও ২৫টি প্রতীক। সেই তালিকায় এখন ‘দাঁড়িপাল্লা’ নেই।