সেন্টমার্টিনে বিপর্যয়ঘন দিন

- আপডেট সময় : ১০:০২:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 37

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে দমকা হাওয়া ও টানা বর্ষণে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে।
বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর পাড়ঘেঁষা দুই শতাধিক ঘরবাড়ি জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে গেছে। দুর্যোগের কারণে গত চার দিন ধরে বন্ধ রয়েছে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ। দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়েছেন, বাজারে ফুরিয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। দিন দিন পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আয়াত উল্লাহ জানান, “সেন্টমার্টিনের মানুষ এমনিতেই নানা সংকটে ছিল। এখন বৈরী আবহাওয়ার কারণে চার দিন ধরে কোনো ট্রলার আসতে পারেনি। বাজারে চাল, ডাল, তেল—সব শেষের পথে। যদি দ্রুত খাদ্যবাহী ট্রলার না আসে, তাহলে অনেকেই না খেয়ে থাকবে।”
দ্বীপের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, “দুই দিন ধরে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি আমাদের দ্বীপে তাণ্ডব চালিয়েছে। পশ্চিম পাশে কিছু ঘরবাড়ি, কটেজ ও ট্রলার ভেঙে গেছে। জেটির একাংশও ধসে পড়েছে। আমরা এখন খুব অসহায়। এমন অবস্থায় মনে হয় না আমরা বাংলাদেশের ভুখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত মানুষ।”

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা আবুল আলী বলেন, “জুন-জুলাই মাস এলেই দুর্যোগ আমাদের সব কিছু শেষ করে দেয়। অনেক কষ্ট করে ত্রিপল দিয়ে টিনের ঘর বানিয়েছিলাম, সেটাও আজ নাফ নদীর পানিতে ভেঙে গেছে। আজ ভোরে ১৫-২০টি ঘর জোয়ারে ভেঙে গেছে। মানুষ নদীর ধারে কোনোরকমে আশ্রয় নিচ্ছে। এখন একটাই আকুতি—একটুখানি ঠাঁই।”
জালিয়া পাড়ার ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, “আজ নাফ নদীর পাড়ঘেঁষা শতাধিক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা সবচেয়ে অসহায়, তারাই সেখানে থাকে। বহুবার বিভিন্ন সংস্থাকে সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছি। শুধু আশ্বাসই পাই, কাজ কিছুই হয় না।”
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শেষপ্রান্তে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে ঢেউ মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানছে। এতে টেকনাফ অংশে অন্তত দুই কিলোমিটার সড়কের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “শুক্রবার দুপুরে মুন্ডার ডেইল ও বাহারছড়া ঘাটের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। জিও ব্যাগ দিয়ে তৈরি বাঁধ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভের রক্ষণাবেক্ষণ সেনাবাহিনী করে থাকে। ঢেউয়ের আঘাতে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”