প্রধান উপদেষ্টা নিজেই চান না নির্বাচন হোক

- আপডেট সময় : ০১:২৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 36

ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দেশের ‘এক ব্যক্তিই চান না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবার (৩০ মে) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর জাপানে প্রধান উপদেষ্টার এক বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, “খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা) জাপানে বসে বিএনপির বদনাম করছেন। একটু লজ্জাও লাগল না দেশের সম্পর্কে বিদেশে বসে বদনাম করতে! তিনি বললেন, একটি দল নির্বাচন চায়। আর আমরা বলতে চাই, একটি লোকই নির্বাচন চায় না—তিনি হলেন ড. ইউনূস।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা জনগণকে বলেছি, নির্বাচন এ বছরের শেষে ডিসেম্বর অথবা সর্বোচ্চ জুনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে কিছু রাজনীতিবিদ প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা কেন, ডিসেম্বরেই কেন নয়? দেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাইছে।”
নির্বাচন ডিসেম্বরেই, জুনে নয়—উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস জোরালো কণ্ঠে বলেন, “বিএনপি বরাবরই নির্বাচন চেয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে। আর এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব স্বয়ং বলেছেন, আমরা বলিনি। পরে তিনিই শিফট করে জুন মাসে গেলেন। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, তাহলে এই নির্বাচন বাংলাদেশে কখনোই হবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি করতে হয়, সেটা ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে।”
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, “আর নির্বাচন যদি করতে না চান, সেটা ইউনূস সাহেবের দায়-দায়িত্ব, আমাদের নয়। আমরা জাতি-জনগণ এই নির্বাচন আদায় করবো। না হলে এ দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ঠিক থাকবে না।”
‘সংস্কার’ করতে কিছু বিদেশি আমদানি করা হয়েছে—উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হবে জাতিকে বিভিন্ন কারণেই। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ‘সংস্কার সংস্কার’ করতে করতে বর্তমান সরকার বহু লোককে আমদানি করেছে সংস্কারের জন্য। আমি আজ অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু সংস্কার করেছিলেন, কিন্তু বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক আনেননি।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের সরকার কিছু বিদেশি লোক আমদানি করেছে দেশের সংস্কারের জন্য। এখন সংস্কার করতে করতে এমন জায়গায় চলে গেছে যে, তারা নির্বাচন দিতেই চায় না।”
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আধুনিক বাংলাদেশের জনক হিসেবে অভিহিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা এই শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে উনার (জিয়াউর রহমান) জন্য দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ যেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বেহেশত নসিব করেন।”

এর আগে মির্জা আব্বাস, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে আসেন। কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তারা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন এবং এরপর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।
এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বেনজীর আহমেদ টিটো, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজসহ অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে একদল সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। বিএনপি এই দিনটি তার ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে।