ঢাকা ০৮:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা ৪৮ ঘণ্টা অন্ধকারে উখিয়ার সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় : ১১:২৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • / 38

টানা ৪৮ ঘণ্টা অন্ধকারে উখিয়ার সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করলেও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে পুরো উপজেলার জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বুধবার থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ টানা ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন স্বাভাবিক হলেও অধিকাংশ গ্রাম এখনো অন্ধকারে

বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও প্রায় অচল হয়ে পড়ে, ফলে ব্যাহত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ না থাকায় গভীর নলকূপ ও বৈদ্যুতিক পাম্প বন্ধ থাকায় অনেক এলাকাবাসী বাধ্য হচ্ছেন খোলা জলাশয়ের পানি ব্যবহারে—যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল আজিজ বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রতি এক কিলোমিটারে ২–৩টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে কোনো টাওয়ারই সচল থাকে না। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলায় যদি রবি, টেলিটক, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল ও বাংলালিংকের সব অপারেটরই একযোগে ব্যর্থ হয়, তাহলে এসব টাওয়ার থাকা না থাকার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”

রাজাপালং এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, “বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলও কাজ করে না। পানি সংগ্রহ করতে অনেক দূরে যেতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ বহুদিন দেখা যায়নি।”

অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সংস্থাগুলো কাজ শুরু করলেও টানা বৃষ্টিপাত ও দুর্গম পরিস্থিতির কারণে এখনো অনেক এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ধীরে দুর্বল হলেও এর প্রভাবে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান চৌধুরী বলেন, “বহু নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি। একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্কও অচল।”

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। টিউবওয়েল ব্যবহার কমে গেছে। পানি সংকট, নেটওয়ার্ক সমস্যা—সব মিলে এলাকার ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।”

উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কাইজার নূর জানান, “প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে এবং লাইনে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বিঘ্নিত ছিল। কোথাও কোথাও ৫–১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ দেওয়া গেলেও অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল পুরোপুরি বন্ধ। তবে শুক্রবার বিকাল থেকে উখিয়া সদরসহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের টিম দুর্যোগের মধ্যেও মেরামত কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে দুর্গম এলাকাগুলোতে যাতায়াতে সমস্যা থাকায় কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। টানা বৃষ্টি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।”

এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

টানা ৪৮ ঘণ্টা অন্ধকারে উখিয়ার সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

আপডেট সময় : ১১:২৫:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করলেও কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় এর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। টানা বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়া ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে পুরো উপজেলার জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বুধবার থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ টানা ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন স্বাভাবিক হলেও অধিকাংশ গ্রাম এখনো অন্ধকারে

বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবাও প্রায় অচল হয়ে পড়ে, ফলে ব্যাহত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ না থাকায় গভীর নলকূপ ও বৈদ্যুতিক পাম্প বন্ধ থাকায় অনেক এলাকাবাসী বাধ্য হচ্ছেন খোলা জলাশয়ের পানি ব্যবহারে—যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল আজিজ বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রতি এক কিলোমিটারে ২–৩টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে কোনো টাওয়ারই সচল থাকে না। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলায় যদি রবি, টেলিটক, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল ও বাংলালিংকের সব অপারেটরই একযোগে ব্যর্থ হয়, তাহলে এসব টাওয়ার থাকা না থাকার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”

রাজাপালং এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, “বিদ্যুৎ নেই, মোবাইলও কাজ করে না। পানি সংগ্রহ করতে অনেক দূরে যেতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগ বহুদিন দেখা যায়নি।”

অন্যদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সংস্থাগুলো কাজ শুরু করলেও টানা বৃষ্টিপাত ও দুর্গম পরিস্থিতির কারণে এখনো অনেক এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ধীরে দুর্বল হলেও এর প্রভাবে আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান চৌধুরী বলেন, “বহু নিম্নাঞ্চল পানিবন্দি। একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে মোবাইল নেটওয়ার্কও অচল।”

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। টিউবওয়েল ব্যবহার কমে গেছে। পানি সংকট, নেটওয়ার্ক সমস্যা—সব মিলে এলাকার ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।”

উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কাইজার নূর জানান, “প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে গেছে এবং লাইনে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বিঘ্নিত ছিল। কোথাও কোথাও ৫–১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ দেওয়া গেলেও অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল পুরোপুরি বন্ধ। তবে শুক্রবার বিকাল থেকে উখিয়া সদরসহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের টিম দুর্যোগের মধ্যেও মেরামত কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তবে দুর্গম এলাকাগুলোতে যাতায়াতে সমস্যা থাকায় কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। টানা বৃষ্টি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।”

এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনঃস্থাপন, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।