জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

- আপডেট সময় : ০২:৪৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 46

আজ ৩০ মে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে প্রাণ হারান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৫ বছর। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি সারা দেশে পালন করছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার প্রথমবারের মতো জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উদযাপন করছে বিএনপি পূর্ণাঙ্গ ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার বিদেশে গমনের পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় এবার জিয়াউর রহমানকে স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচির।
বিএনপি ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ৮ দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং দুস্থদের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ।
আজ শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের অফিসগুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে আয়োজিত হয় স্মরণসভা। দেশের বিভিন্ন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া। এছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে চাল-ডাল, বস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে শহীদ রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। পেশাদার সেনা কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অগ্রনায়ক। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন এবং যুদ্ধশেষে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত হন।
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় সেনাবাহিনীর ভেতরে আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন জিয়াউর রহমান। পরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে জাতীয় পুনর্গঠন শুরু করেন তিনি। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ দর্শনের প্রবর্তক হিসেবে জিয়াউর রহমান দেশে মধ্যপন্থী, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি রাজনীতিকে বহুমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য বাম ও ডান—উভয় ধারার রাজনীতিকদের বিএনপিতে জায়গা দেন।
তাঁর শাসনামলে দেশে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও কৃষিখাতে স্থিতিশীলতা আনয়ন ছিল তাঁর সরকারের মূল অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি নিজে ছিলেন সৎ, পরিশ্রমী ও নিয়মানুবর্তিতার প্রতীক, যা সাধারণ মানুষের আস্থাকে দৃঢ় করেছিল।
আজকের দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন ও অবদান স্মরণ করে বিএনপি এবং দলীয় সমর্থকরা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন। তাঁর নেতৃত্ব, দেশপ্রেম ও কর্মদর্শন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে মনে করছে দলটি।