ঢাকা ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলা বন্দরে সাজানো ডাকাতির রহস্য ফাঁস করলো কোস্ট গার্ড

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • আপডেট সময় : ১০:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / 56

মোংলা বন্দরে সাজানো ডাকাতির রহস্য ফাঁস করলো কোস্ট গার্ড

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোংলা বন্দরে নোঙর করা একটি বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত কথিত ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনা। এ ঘটনায় চুরি হওয়া মূল্যবান যন্ত্রাংশ উদ্ধার এবং তিনজন জড়িত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) দুপুরে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দরের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান, নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. নজরুল ইসলাম এবং কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।

তিনি জানান, ২৬ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মোংলা পোর্টের কাছে বেইস ক্রিক এলাকায় নোঙর করা ‘এমভি সেঁজুতি’ নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ১২ সদস্যের একটি দল হামলা চালায়। তারা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ লুট করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর কোস্ট গার্ড তৎপর হয়ে তদন্তে নামে। নাবিকদের বক্তব্য ও গোপন তথ্য বিশ্লেষণ করে ২৭ মে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া যন্ত্রাংশ—ইঞ্জিনের স্পেয়ার পার্টস, বিয়ারিং, ব্যাটারি ও চার্জারসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার এবং তিনজনকে আটক করে।

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে জিজ্ঞাসাবাদে। জানা যায়, ডাকাতির ঘটনাটি আদতে ছিল সাজানো। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় নাবিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। সেই অসন্তোষ কাজে লাগিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই নাটক সাজান, যার উদ্দেশ্য ছিল যন্ত্রাংশ চুরি করে বিক্রি করা এবং আর্থিক লাভ ভাগাভাগি করা।

আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেছে, জাহাজের অভ্যন্তরীণ কিছু সদস্যই এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিল এবং ডাকাতির গল্প তৈরি করে মালিক পক্ষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। অথচ জাহাজের মালিক পক্ষের ক্যাপ্টেন সাহিকুল সাহেব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো অজুহাতে আসেননি।

বর্তমানে উদ্ধারকৃত মালামাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আটক ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় থানায় পাঠানো হচ্ছে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, তারা সন্দেহ করছে—দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি পরিত্যক্ত রাখার পেছনে আরেকটি সুগভীর অপরাধমূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। পাশাপাশি, এই সাজানো ঘটনার আড়ালে সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষ বলে মত দিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণামূলক অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংস্থাটি সর্বদা তৎপর থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মোংলা বন্দরে সাজানো ডাকাতির রহস্য ফাঁস করলো কোস্ট গার্ড

আপডেট সময় : ১০:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

মোংলা বন্দরে নোঙর করা একটি বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত কথিত ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনা। এ ঘটনায় চুরি হওয়া মূল্যবান যন্ত্রাংশ উদ্ধার এবং তিনজন জড়িত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ মে) দুপুরে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দরের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান, নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. নজরুল ইসলাম এবং কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।

তিনি জানান, ২৬ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মোংলা পোর্টের কাছে বেইস ক্রিক এলাকায় নোঙর করা ‘এমভি সেঁজুতি’ নামের একটি বাংলাদেশি জাহাজে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ১২ সদস্যের একটি দল হামলা চালায়। তারা জাহাজের নাবিকদের জিম্মি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ লুট করে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর কোস্ট গার্ড তৎপর হয়ে তদন্তে নামে। নাবিকদের বক্তব্য ও গোপন তথ্য বিশ্লেষণ করে ২৭ মে অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া যন্ত্রাংশ—ইঞ্জিনের স্পেয়ার পার্টস, বিয়ারিং, ব্যাটারি ও চার্জারসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার এবং তিনজনকে আটক করে।

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে জিজ্ঞাসাবাদে। জানা যায়, ডাকাতির ঘটনাটি আদতে ছিল সাজানো। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় নাবিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। সেই অসন্তোষ কাজে লাগিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই নাটক সাজান, যার উদ্দেশ্য ছিল যন্ত্রাংশ চুরি করে বিক্রি করা এবং আর্থিক লাভ ভাগাভাগি করা।

আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেছে, জাহাজের অভ্যন্তরীণ কিছু সদস্যই এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিল এবং ডাকাতির গল্প তৈরি করে মালিক পক্ষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। অথচ জাহাজের মালিক পক্ষের ক্যাপ্টেন সাহিকুল সাহেব ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো অজুহাতে আসেননি।

বর্তমানে উদ্ধারকৃত মালামাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আটক ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় থানায় পাঠানো হচ্ছে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, তারা সন্দেহ করছে—দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি পরিত্যক্ত রাখার পেছনে আরেকটি সুগভীর অপরাধমূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। পাশাপাশি, এই সাজানো ঘটনার আড়ালে সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষ বলে মত দিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণামূলক অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংস্থাটি সর্বদা তৎপর থাকবে।