ঢাকা ০১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কারামুক্ত জামায়াত নেতা আজহার বললেন

আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:১৮:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / 50

কারামুক্ত জামায়াত নেতা আজহার

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর জনসমক্ষে এলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এক আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক।”

বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। হাসপাতাল গেটেই তাকে অভ্যর্থনা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি আবেগঘন বক্তব্য দেন।

সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তাওফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।”

তিনি বলেন, “এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতোদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাদের আর ফেরানো যাবে না।”

‘৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লব’ ও ‘৫ আগস্টের পতন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এই মুক্তি। তাদের কারণেই ৫ আগস্ট দেশের জনগণ একটি অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা ১৫ বছর ধরে রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।”

আগামী দিনে জনগণের সঙ্গে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমি জানি, এই মুক্তির দায়িত্ব আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাকে তাওফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামি মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।”

রাজপথে পুনরায় শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে এটিএম আজহার বলেন, “আমরা কখনও অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবও না। আমাদের আন্দোলন থেমে নেই, থামবেও না। আজ থেকে আবার নতুনভাবে পথচলা শুরু হলো।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কারামুক্ত জামায়াত নেতা আজহার বললেন

আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক

আপডেট সময় : ১২:১৮:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পাওয়ার পর কারামুক্ত হয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর জনসমক্ষে এলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এক আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক।”

বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হন। হাসপাতাল গেটেই তাকে অভ্যর্থনা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিয়ে তিনি আবেগঘন বক্তব্য দেন।

সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তাওফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।”

তিনি বলেন, “এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতোদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার আইনজীবীরা দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা সঠিক তথ্য-উপাত্ত, দলিল ও যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন, এই মামলায় কোনো ভিত্তি ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি আজ মুক্ত, কিন্তু যারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, তাদের আর ফেরানো যাবে না।”

‘৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লব’ ও ‘৫ আগস্টের পতন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই ৩৬ জুলাইয়ের মহাবিপ্লবীদের। যাদের রক্ত, ঘাম আর আন্দোলনের ফসল আজকের এই মুক্তি। তাদের কারণেই ৫ আগস্ট দেশের জনগণ একটি অত্যাচারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা ১৫ বছর ধরে রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।”

আগামী দিনে জনগণের সঙ্গে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমি জানি, এই মুক্তির দায়িত্ব আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাকে তাওফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামি মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।”

রাজপথে পুনরায় শক্ত অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে এটিএম আজহার বলেন, “আমরা কখনও অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, করবও না। আমাদের আন্দোলন থেমে নেই, থামবেও না। আজ থেকে আবার নতুনভাবে পথচলা শুরু হলো।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা।