ঢাকা ০১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 59

অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জামায়াতের

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সংঘাত ও কাদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রয়োজন অর্থবহ সংলাপ, যার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।

শনিবার (২৪ মে) সকালে মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মানুষকে বিচলিত করেছে। জামায়াতে ইসলাম এই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—জাতিকে সংঘাতের পথে নয়, বরং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে এগোতে হবে।”

তিনি জানান, জামায়াত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে জাতীয় স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসে। “আমরা দুটি রোডম্যাপ চেয়েছিলাম—সংস্কার এবং নির্বাচনের। কিন্তু কোনোটিই প্রকাশ করা হয়নি। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এগুলো জরুরি।”

সরকারের দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনিয়মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জনের সুযোগ ছিল। কিছু প্রত্যাশা পূরণ হলেও জনগণের মৌলিক অধিকার এখনও অপূর্ণ। বিগত ১৫ বছরে দুঃশাসন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করেছে। পরপর তিনটি নির্বাচনে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন ও বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই বিচার হোক, তবে তা যেন হয় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। বিচারের নামে অবিচার হলে অপরাধচক্র আরও সাহস পাবে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।”

মানবিক করিডোর ও জাতীয় স্বার্থ

মানবিক করিডোর বিষয়ক সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে ডা. শফিক বলেন, “এটা তাড়াহুড়ার সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়। এখন দেশে কার্যকর সংসদ নেই। রাজনৈতিক দল, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিলে।”

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন এই বন্দর। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। জাতির স্বার্থে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।”

সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গে সম্মানজনক বক্তব্য

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যেন কোনোভাবেই বিতর্কিত করা না হয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা আমাদের জাতীয় সম্মানের অংশ।”

আন্তর্জাতিক ইস্যু: গাজা, সিরিয়া ও রোহিঙ্গা সমস্যা

গাজা ইস্যুতে সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি নয়, যুদ্ধ বন্ধ চাই। এটি সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব। সিরিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানও জরুরি। ত্রাণ নয়, তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।”

পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। আমরা সেই কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই। তিনিই তো জোর করে দায়িত্ব নেননি, আমরা তাকে দিয়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা।”

তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাজ পরিবর্তন চাই। আল্লাহর দেওয়া বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একটি মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় দেশের সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জামায়াতের

আপডেট সময় : ১২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সংঘাত ও কাদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে প্রয়োজন অর্থবহ সংলাপ, যার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।

শনিবার (২৪ মে) সকালে মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি মানুষকে বিচলিত করেছে। জামায়াতে ইসলাম এই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাহী পরিষদের বৈঠক ডেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—জাতিকে সংঘাতের পথে নয়, বরং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে এগোতে হবে।”

তিনি জানান, জামায়াত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে জাতীয় স্বার্থে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসে। “আমরা দুটি রোডম্যাপ চেয়েছিলাম—সংস্কার এবং নির্বাচনের। কিন্তু কোনোটিই প্রকাশ করা হয়নি। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এগুলো জরুরি।”

সরকারের দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনিয়মের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৭১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জনের সুযোগ ছিল। কিছু প্রত্যাশা পূরণ হলেও জনগণের মৌলিক অধিকার এখনও অপূর্ণ। বিগত ১৫ বছরে দুঃশাসন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করেছে। পরপর তিনটি নির্বাচনে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন ও বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই বিচার হোক, তবে তা যেন হয় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। বিচারের নামে অবিচার হলে অপরাধচক্র আরও সাহস পাবে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না।”

মানবিক করিডোর ও জাতীয় স্বার্থ

মানবিক করিডোর বিষয়ক সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে ডা. শফিক বলেন, “এটা তাড়াহুড়ার সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়। এখন দেশে কার্যকর সংসদ নেই। রাজনৈতিক দল, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিলে।”

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন এই বন্দর। এর ভবিষ্যৎ নিয়ে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। জাতির স্বার্থে সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।”

সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গে সম্মানজনক বক্তব্য

সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যেন কোনোভাবেই বিতর্কিত করা না হয়। সেনাবাহিনীর মর্যাদা আমাদের জাতীয় সম্মানের অংশ।”

আন্তর্জাতিক ইস্যু: গাজা, সিরিয়া ও রোহিঙ্গা সমস্যা

গাজা ইস্যুতে সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি নয়, যুদ্ধ বন্ধ চাই। এটি সংলাপের মাধ্যমেই সম্ভব। সিরিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানও জরুরি। ত্রাণ নয়, তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।”

পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। আমরা সেই কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই। তিনিই তো জোর করে দায়িত্ব নেননি, আমরা তাকে দিয়েছি। এখন আমাদের দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা।”

তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাজ পরিবর্তন চাই। আল্লাহর দেওয়া বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একটি মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় দেশের সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।”