মরদেহেও রেহাই নেই, নারীসহ আহত ৯
লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে বর্বর ডাকাতি

- আপডেট সময় : ০১:৪৪:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / 37

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ও চরম পৈশাচিক ঘটনা। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে বর্বর ডাকাতির সময় শুধু জীবিত স্বজনদের নয়, মৃতদেহের উপরও চালানো হয়েছে নৃশংস হামলা। ডাকাতদের হাতে নারীসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে, উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের তিলপাড়া এলাকায়।
নিহতের পরিবার জানায়, মুকবুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ছবদর আলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাকার মিরপুর আহসানিয়া হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের পথে রওনা দেন। পথে তিলপাড়ায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে ডাকাত দল। এরপর সশস্ত্র অবস্থায় গাড়িটি ঘিরে ধরে চালক ও স্বজনদের মারধর করে তারা।
ডাকাতরা মরদেহের সঙ্গে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন ও প্রায় ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয়। এ পর্যন্তও পরিস্থিতি সীমা অতিক্রম করেনি। কিন্তু দাবি অনুযায়ী টাকা না পেয়ে মৃত ছবদর আলীর মরদেহের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ডাকাতরা। এই দৃশ্য স্বজনদের মানসিকভাবে ভেঙে দেয় এবং এলাকায় সৃষ্টি করে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন—অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. ফিরুজ মিয়া, গাড়ির মালিক খলিল মিয়া, নিহতের স্বজন রাসেল মিয়া, ছালেক মিয়া, নাহিদ মিয়া, আলমগীর মিয়া, সালাউদ্দিন, আলেয়া বেগম এবং আলী নেওয়াজ মিয়া।
নিহতের ছেলে মো. আলমগীর মিয়া জানান, “টাকা পয়সা লুটে নিয়েছে, এটা আমরা সহ্য করতাম। কিন্তু আমার বাবার লাশের উপর যে হামলা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বাবার দাফন শেষে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।”
এলাকাবাসী বারবার এই সড়কে ডাকাতির অভিযোগ তুলেছে। স্থানীয় মো. মুসলে উদ্দিন বলেন, “ভোর ও সন্ধ্যার সময় তিলপাড়া রাস্তাটি যেন এক ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়। মাঝে মাঝেই ডাকাতি হয়।” আজহারুল ইসলাম দুর্জয় জানান, “ঢাকা থেকে নিরাপদে আসলেও এই এলাকায় ঢুকলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।”
স্থানীয় আইনজীবী মো. রেজাউল হক আমজাদ বলেন, “এটি শুধু ডাকাতি নয়, একটি লাশবাহী গাড়ির মর্যাদাকেও দলিত করা হয়েছে। শোকাহত পরিবারকে এভাবে আঘাত করার ঘটনা সভ্য সমাজে অকল্পনীয়।”
নাসিরনগর থানার ওসি মো. খায়রুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “এ এলাকাটি ডাকাতির ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা নাসরিন বলেন, “লাশবাহী গাড়িতে ডাকাতি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অমানবিক। প্রশাসন এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
এই নির্মম ঘটনার পর সড়কপথে যাত্রী ও লাশবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।