ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩০ দিনের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

৩০ দিনের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের সিদ্ধান্ত

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১০ মে) রাত ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।

তিনি বলেন, “আজ উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।”

তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাইবার স্পেসসহ দলটির সকল কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে একটি সরকারি পরিপত্র আগামী কর্মদিবসে জারি করা হবে।”

আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাতেই যমুনার সামনে অবস্থান নেন। পরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (৯ মে) বাদ জুমা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী জমায়েত হন। সেখানে মঞ্চ স্থাপন করে দাবিসমূহ উপস্থাপন এবং সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন, যা রাজধানীতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সরকার প্রথমে এক বিবৃতির মাধ্যমে আন্দোলনের দাবিকে “গুরুত্বের সঙ্গে” বিবেচনার কথা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ওঠা স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ এবং জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের আলোকে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

এছাড়াও সরকার জানায়, ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। একইসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের ঘটনায় জনমনে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভ সম্পর্কে সরকার সচেতন এবং এ বিষয়ে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত শনিবার আন্দোলনকারীদের লাগাতার অবস্থান ও শাহবাগ অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

৩০ দিনের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের সিদ্ধান্ত

আপডেট সময় : ১১:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১০ মে) রাত ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান।

তিনি বলেন, “আজ উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারবে।”

তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাইবার স্পেসসহ দলটির সকল কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ বিষয়ে একটি সরকারি পরিপত্র আগামী কর্মদিবসে জারি করা হবে।”

আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাতেই যমুনার সামনে অবস্থান নেন। পরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (৯ মে) বাদ জুমা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে হাজারো আন্দোলনকারী জমায়েত হন। সেখানে মঞ্চ স্থাপন করে দাবিসমূহ উপস্থাপন এবং সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন, যা রাজধানীতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সরকার প্রথমে এক বিবৃতির মাধ্যমে আন্দোলনের দাবিকে “গুরুত্বের সঙ্গে” বিবেচনার কথা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ওঠা স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ এবং জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের আলোকে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

এছাড়াও সরকার জানায়, ইতোমধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। একইসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের ঘটনায় জনমনে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভ সম্পর্কে সরকার সচেতন এবং এ বিষয়ে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

শেষ পর্যন্ত শনিবার আন্দোলনকারীদের লাগাতার অবস্থান ও শাহবাগ অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।