ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ?

মোঃ হাছানুর ইমাম জুয়েল
  • আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ?

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে। স্বাধীনতার পর ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে আটবারই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নারী। তারই অংশ হিসেবে তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিকবার বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বর্তমানে বয়স, অসুস্থতা ও দীর্ঘ কারাবন্দি জীবনের কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটাই সরে গেছেন একসময়ের এই তুখোড় নেত্রী। অন্যদিকে, তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্যেও তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

এই পটভূমিতে দলীয় নেতাকর্মী ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এখন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ—ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানের দিকে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডা. জুবাইদা রহমান
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডা. জুবাইদা রহমান

ডা. জুবাইদা রহমান: দূরে থেকেও কেন্দ্রের কাছে
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বরখাস্ত হন। প্রায় ১৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরছেন, শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এই প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

সিলেটের রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে বেড়ে ওঠা জুবাইদা রহমানের বাবা ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী এবং চাচা মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী। নিজে রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, ‘ক্লিন ইমেজ’ ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য তাকে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাব্য একজন হিসেবে উপস্থাপন করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জুবাইদা কিছুদিন ঢাকায় থাকবেন এবং খালেদা জিয়ার সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। এ সময় রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা বাড়বে বলেই ধারণা।

সৈয়দা শর্মিলা রহমান: আড়ালে থেকে সামনে
আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং দুই কন্যার জননী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সরাসরি রাজনীতিতে কখনো অংশ নেননি। তবে কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার পাশে ছায়াসঙ্গী হিসেবে তার ভূমিকা পরিবার ও দলের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা তৈরি করেছে।

তিনি সবসময় আড়ালে থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাকে নিয়েও চলছে চর্চা। নেতৃত্বে সক্রিয় না হলেও তার পারিবারিক ভূমিকা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতের জন্য তাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

খালেদা জিয়ার পাশে শর্মিলা রহমান
খালেদা জিয়ার পাশে শর্মিলা রহমান

নারী নেতৃত্ব ও বিএনপির ভবিষ্যৎ
তারেক রহমানের অনুপস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অক্ষমতায় বিএনপি এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। প্রবীণ নেতৃত্বও নতুন জোর এনে দিতে পারছে না। ফলে পরিবারকেন্দ্রিক নতুন নেতৃত্বের সন্ধান অবধারিত হয়ে উঠছে।

বিএনপির অভ্যন্তরে অনেকেই মনে করছেন, শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য এই দুই নারী নেতৃত্বে এলে তা দলের ভাবমূর্তি ও প্রোফাইল আধুনিক তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতামত
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “পরিবারের সিদ্ধান্তে যদি তারা রাজনীতিতে আসেন, নেতাকর্মীরা তা সাদরে গ্রহণ করবেন। অনেকটা খালেদা জিয়ার আগমনকালের মতোই।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “খালেদা জিয়া ও তার পুত্রবধূদের দেশে আগমন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন চলছে। নিরাপত্তা নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন খান মোহন বরং কিছুটা সতর্ক। তার মতে, “তারেক রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে সবাই তাকেই মানবে। এই মুহূর্তে দুই পুত্রবধূর সরাসরি রাজনীতিতে আসা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু মনে করেন, “চাইলেও না চাইলেও তারা ইতিমধ্যে প্রভাবশালী ও প্রাসঙ্গিক ব্যক্তি। ভবিষ্যতে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিলে তারা সেই শূন্যতা পূরণে উপযুক্ত হবেন।”

জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক আগমন শুধু একটি পরিবার নয়, বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বেরও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। খালেদা জিয়ার মতোই, সংকটে নারীরাই নেতৃত্বে এসেছেন—বাংলাদেশের রাজনীতি বহুবার তার প্রমাণ দিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ?

আপডেট সময় : ১০:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

দেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের একটি শক্তিশালী ঐতিহ্য রয়েছে। স্বাধীনতার পর ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে আটবারই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নারী। তারই অংশ হিসেবে তিনবার প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিকবার বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বর্তমানে বয়স, অসুস্থতা ও দীর্ঘ কারাবন্দি জীবনের কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটাই সরে গেছেন একসময়ের এই তুখোড় নেত্রী। অন্যদিকে, তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্যেও তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

এই পটভূমিতে দলীয় নেতাকর্মী ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এখন খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ—ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানের দিকে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডা. জুবাইদা রহমান
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ডা. জুবাইদা রহমান

ডা. জুবাইদা রহমান: দূরে থেকেও কেন্দ্রের কাছে
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটিতে লন্ডনে গিয়েছিলেন চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বরখাস্ত হন। প্রায় ১৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরছেন, শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এই প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

সিলেটের রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে বেড়ে ওঠা জুবাইদা রহমানের বাবা ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী এবং চাচা মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী। নিজে রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, ‘ক্লিন ইমেজ’ ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য তাকে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাব্য একজন হিসেবে উপস্থাপন করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জুবাইদা কিছুদিন ঢাকায় থাকবেন এবং খালেদা জিয়ার সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। এ সময় রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা বাড়বে বলেই ধারণা।

সৈয়দা শর্মিলা রহমান: আড়ালে থেকে সামনে
আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং দুই কন্যার জননী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সরাসরি রাজনীতিতে কখনো অংশ নেননি। তবে কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার পাশে ছায়াসঙ্গী হিসেবে তার ভূমিকা পরিবার ও দলের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা তৈরি করেছে।

তিনি সবসময় আড়ালে থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাকে নিয়েও চলছে চর্চা। নেতৃত্বে সক্রিয় না হলেও তার পারিবারিক ভূমিকা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতের জন্য তাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।

খালেদা জিয়ার পাশে শর্মিলা রহমান
খালেদা জিয়ার পাশে শর্মিলা রহমান

নারী নেতৃত্ব ও বিএনপির ভবিষ্যৎ
তারেক রহমানের অনুপস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অক্ষমতায় বিএনপি এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। প্রবীণ নেতৃত্বও নতুন জোর এনে দিতে পারছে না। ফলে পরিবারকেন্দ্রিক নতুন নেতৃত্বের সন্ধান অবধারিত হয়ে উঠছে।

বিএনপির অভ্যন্তরে অনেকেই মনে করছেন, শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য এই দুই নারী নেতৃত্বে এলে তা দলের ভাবমূর্তি ও প্রোফাইল আধুনিক তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতামত
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “পরিবারের সিদ্ধান্তে যদি তারা রাজনীতিতে আসেন, নেতাকর্মীরা তা সাদরে গ্রহণ করবেন। অনেকটা খালেদা জিয়ার আগমনকালের মতোই।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “খালেদা জিয়া ও তার পুত্রবধূদের দেশে আগমন উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন চলছে। নিরাপত্তা নিয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন খান মোহন বরং কিছুটা সতর্ক। তার মতে, “তারেক রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে সবাই তাকেই মানবে। এই মুহূর্তে দুই পুত্রবধূর সরাসরি রাজনীতিতে আসা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।”

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু মনে করেন, “চাইলেও না চাইলেও তারা ইতিমধ্যে প্রভাবশালী ও প্রাসঙ্গিক ব্যক্তি। ভবিষ্যতে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিলে তারা সেই শূন্যতা পূরণে উপযুক্ত হবেন।”

জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমানের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক আগমন শুধু একটি পরিবার নয়, বাংলাদেশের নারী নেতৃত্বেরও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। খালেদা জিয়ার মতোই, সংকটে নারীরাই নেতৃত্বে এসেছেন—বাংলাদেশের রাজনীতি বহুবার তার প্রমাণ দিয়েছে।