আবরার ফাহাদ হত্যা: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

- আপডেট সময় : ১২:৪৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্ট ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন। সম্প্রতি এই মামলার ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ওই ঘটনায় বুয়েটসহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক জনমত তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
ঘটনার দিন আবরার কুষ্টিয়ার নিজ বাড়ি থেকে ফিরে হলে এসেছিলেন। ফেসবুকে ভারতবিরোধী একটি পোস্টের জের ধরে রাত ৮টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের কিছু সদস্য তাকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতভর দুই দফায় কক্ষে কক্ষে ঘুরিয়ে বর্বর নির্যাতনের পর তাকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়। রাত ৩টার দিকে জানা যায় তিনি আর বেঁচে নেই। বুয়েট মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ডিবির পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান দ্রুত তদন্ত শেষ করে মাত্র ৩৭ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে তিনজন এখনো পলাতক। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পাঁচজনের মধ্যে কেউ পলাতক নেই। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে। পরবর্তীতে আসামিরা জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেন।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আবরার ফাহাদের নাম আবারো সামনে চলে আসে। তার হত্যাকাণ্ড নতুন প্রজন্মের কাছে নিপীড়নবিরোধী প্রতীক হয়ে ওঠে। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এ মামলার শুনানি কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি গ্রহণ শুরু হয়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে এক আলোচিত ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পন্ন হলো।