পাক-ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা প্রবল

- আপডেট সময় : ০৮:০৮:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে

ভারতীয় কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার পর পাক-ভারত সম্পর্ক যুদ্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ার একতরফা প্রচারণায় পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের দায় চাপানো হয়েছে পাকিস্তানের ওপর।
ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী এই প্রোপাগান্ডায় তাল মিলিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন-কানুন উপেক্ষা করে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। পাকিস্তান এই পানি আগ্রাসনকে যুদ্ধের সামিল বলে ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি খুব উত্তেজনার দিকে মোড় নিয়েছে।
উভয় কাশ্মীরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত-পাকিস্তানের সেনারা যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান কি সম্ভাব্য আরেকটি যুদ্ধের মুখোমুখি? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে-আশঙ্কা প্রবল। ভারতের একতরফা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানও পাল্টা কড়া জবাব দিয়েছে। পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয়দের পাকিস্তান ছাড়ার সময় বেধে দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধান স্থল সীমান্ত ওয়াগা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে পাকিস্তান।
কাশ্মীর সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও যুদ্ধযান মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের সম্ভাব্য হামলার মোকাবেলায় পাকিস্তান সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভারত যুদ্ধের দিকে আগালে পাকিস্তান কড়া জবাব দেবে।
কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো পদক্ষেপ নিতে গেলেও ভারতকে যথেষ্ট ঝুঁকিতে পড়তে হবে। প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের ওপর এমন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল কেন? কেনইবা, ভারতীয় মিডিয়া একযোগে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণায় লাগল। এর সহজ উত্তর হচ্ছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন টলটলায়মান। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছে।
ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধেও মোদি সরকার বৈরি আচরণ করছে। ওয়াকফ আইন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপে সেখানকার জনসাধারণ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ।
ভারতীয় কাশ্মীরে জনসংখ্যার তুলনায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। শ্রীনগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পহেলগাম। যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার নিকটেই একাধিক সেনা চৌকি ছিল। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দুস্কৃতকারীরা কীভাবে পালাতে সক্ষম হলো? এ এক বিরাট প্রশ্ন। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো হলো। ভারতের সরকার ও মিডিয়ার একতরফা প্রচারণার বরাবর হয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তান নিজেই সেখানে সন্ত্রাসী ঘটনায় জর্জরিত সেখানে ভারতে হামলা চালাবে কোন কারণে? গত তিন দশকে প্রায় ৮০ হাজার পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুন খোয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ভারতের মদদ রয়েছে বলে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে।
নরেন্দ্র মোদি সরকারি পাকিস্তানের ওপর দায় চাপিয়ে ভারতের জনমতকে উসকে দেওয়ার সস্তা কৌশল গ্রহণ করেছে।
ভারতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তুঙ্গে ওঠা জনমত ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তানের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। ভারতীয়রা মনে করছে পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল অবস্থায় আছে। তাদেরকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিলে তারা সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু তারা ভুলে গেছে পাকিস্তান একটি পারমানবিক শক্তিধর দেশ। যুদ্ধে ভারত সুবিধা করতে পারবে না জেনেই সিমলা চুক্তি লঙ্ঘন করে সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই মুহূর্তে দুই দেশ শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়ালে তা ভারতীয় উপমহাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।
লেখক: পাকিস্তানের ‘বোল’ টিভির নির্বাহী সম্পাদক ও
এপির ইসলামাবাদ করেসপন্ডেন্ট