ঢাকা ১১:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসে আওয়ামী সিন্ডিকেটের একচেটিয়া দখল

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • আপডেট সময় : ১২:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ৫৫ বার পড়া হয়েছে

মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিভিন্ন দুর্নীতি, মামলা ও অনিয়মের অভিযোগে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতারা এখনও মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস ও পরিবহনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই এ কে আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবত এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু স্টিভিডোর ও হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এখনো বন্দরে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এসব প্রভাবশালী ঠিকাদারদের কারণে সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার মালিকানাধীন খালিদ ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বন্দরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পলাতক অবস্থায় থেকেও বিভিন্ন আমদানিকারকের পণ্য খালাসে একতরফা প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। ক্লিংকার, কয়লা, সারসহ আমদানি করা বহু পণ্য খালাসে তার প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া কাজ করছে।

মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস
মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস

অন্যদিকে, বরিশালের সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবতের মালিকানাধীন ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ বর্তমানে তার শ্যালক মোস্তাক মিঠুর পরিচালনায় মোংলা বন্দরে দাপটের সঙ্গে কাজ চালাচ্ছে। সরকারি খাদ্যশস্য চাল ও গম আমদানির কাজেও তারা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই কার্যক্রম বন্দরের বিধি-বিধান ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

চট্টগ্রাম বন্দরেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে মেসার্স গ্রীন এন্টারপ্রাইজ মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক সামসুজ্জামান রাসেল সরকার পতনের পর আত্মগোপনে গেলেও মোংলা বন্দরে তার ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী রিজিমের সময় ক্ষমতাধর এসব স্টিভিডোর কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট তৈরি করে তা সরকারের শীর্ষ মহলে পাঠানো হবে।

মোংলা থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, বন্দরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কঠোর নজরদারি করছে। গত সপ্তাহে ডেভিল হান্ট অভিযানে বন্দরের প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা সরোয়ার হোসেনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য বন্দরের ট্রাফিক পরিচালকের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসে আওয়ামী সিন্ডিকেটের একচেটিয়া দখল

আপডেট সময় : ১২:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

বিভিন্ন দুর্নীতি, মামলা ও অনিয়মের অভিযোগে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতারা এখনও মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস ও পরিবহনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই এ কে আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবত এবং খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু স্টিভিডোর ও হ্যান্ডলিং প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এখনো বন্দরে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এসব প্রভাবশালী ঠিকাদারদের কারণে সাধারণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার মালিকানাধীন খালিদ ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বন্দরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি পলাতক অবস্থায় থেকেও বিভিন্ন আমদানিকারকের পণ্য খালাসে একতরফা প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। ক্লিংকার, কয়লা, সারসহ আমদানি করা বহু পণ্য খালাসে তার প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া কাজ করছে।

মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস
মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস

অন্যদিকে, বরিশালের সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবতের মালিকানাধীন ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ বর্তমানে তার শ্যালক মোস্তাক মিঠুর পরিচালনায় মোংলা বন্দরে দাপটের সঙ্গে কাজ চালাচ্ছে। সরকারি খাদ্যশস্য চাল ও গম আমদানির কাজেও তারা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই কার্যক্রম বন্দরের বিধি-বিধান ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

চট্টগ্রাম বন্দরেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে মেসার্স গ্রীন এন্টারপ্রাইজ মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক সামসুজ্জামান রাসেল সরকার পতনের পর আত্মগোপনে গেলেও মোংলা বন্দরে তার ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।

সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী রিজিমের সময় ক্ষমতাধর এসব স্টিভিডোর কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। রিপোর্ট তৈরি করে তা সরকারের শীর্ষ মহলে পাঠানো হবে।

মোংলা থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, বন্দরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কঠোর নজরদারি করছে। গত সপ্তাহে ডেভিল হান্ট অভিযানে বন্দরের প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা সরোয়ার হোসেনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের জন্য বন্দরের ট্রাফিক পরিচালকের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।