ঢাকা ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারের অপহৃত ৬ শ্রমিক উদ্ধার

প্রতিনিধি, কক্সবাজার
  • আপডেট সময় : ১০:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের অপহৃত ৬ শ্রমিক উদ্ধার

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কক্সবাজারে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ছয়জন নির্মাণশ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন—জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মারুফ আহমদ (১৮), শাহিন আহমদ (২১), রশিদ আহমদ (২০), খালেদ হাসান (১৯), আব্দুল জলিল (৫৫) এবং এমাদ উদ্দিন (২২)।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ছয় শ্রমিকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে দুইজনের মোবাইল ফোন সক্রিয় হলে লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় তারা টেকনাফের রাজারছড়া এলাকায় রয়েছে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায় এবং পাহাড়ের গহীনে তাদের উদ্ধার করে।

অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে রাজমিস্ত্রীর কাজের জন্য ছয়জন শ্রমিক কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছানোর পর পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন, ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

রশিদ আহমদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, “আমার ভাই দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একটি ঠিকাদারির অধীনে কাজ করত। এবারে যাওয়ার পর থেকেই আমরা তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। বিশেষ করে টেকনাফ যেহেতু অপহরণ ও মানবপাচারের জন্য কুখ্যাত এলাকা, আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম।”

কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ জকিগঞ্জের ছয় নির্মাণশ্রমিক 
কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ জকিগঞ্জের ছয় নির্মাণশ্রমিক

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, “রাজারছড়া এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অতীতেও এখানে একাধিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি জেনে আমিও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “আমাদের থানার ছয়জন শ্রমিক নিখোঁজ হন কক্সবাজারে গিয়ে। আমরা পরিবারকে সহায়তা করেছি এবং টেকনাফ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। উদ্ধার অভিযান তাদের সহায়তায় সফল হয়।”

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আরও জানান, “টেকনাফে দীর্ঘদিন ধরে একটি সশস্ত্র অপহরণচক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের নিয়ে চক্র গড়ে তুলেছে। বিগত পাঁচ মাসে প্রায় ৫০ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।”

উল্লেখ্য, অপহৃত ছয়জন সবাই জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় রাজমিস্ত্রী। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হলো, যা পরিবারগুলোর জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর। পুলিশের অভিযান এখনও চলমান রয়েছে অপহরণচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কক্সবাজারের অপহৃত ৬ শ্রমিক উদ্ধার

আপডেট সময় : ১০:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজারে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ছয়জন নির্মাণশ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে টেকনাফের রাজারছড়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া শ্রমিকরা হলেন—জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মারুফ আহমদ (১৮), শাহিন আহমদ (২১), রশিদ আহমদ (২০), খালেদ হাসান (১৯), আব্দুল জলিল (৫৫) এবং এমাদ উদ্দিন (২২)।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ছয় শ্রমিকের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে দুইজনের মোবাইল ফোন সক্রিয় হলে লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় তারা টেকনাফের রাজারছড়া এলাকায় রয়েছে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায় এবং পাহাড়ের গহীনে তাদের উদ্ধার করে।

অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে রাজমিস্ত্রীর কাজের জন্য ছয়জন শ্রমিক কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছানোর পর পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন, ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

রশিদ আহমদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, “আমার ভাই দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একটি ঠিকাদারির অধীনে কাজ করত। এবারে যাওয়ার পর থেকেই আমরা তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। বিশেষ করে টেকনাফ যেহেতু অপহরণ ও মানবপাচারের জন্য কুখ্যাত এলাকা, আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম।”

কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ জকিগঞ্জের ছয় নির্মাণশ্রমিক 
কক্সবাজারে গিয়ে নিখোঁজ জকিগঞ্জের ছয় নির্মাণশ্রমিক

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, “রাজারছড়া এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অতীতেও এখানে একাধিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি জেনে আমিও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “আমাদের থানার ছয়জন শ্রমিক নিখোঁজ হন কক্সবাজারে গিয়ে। আমরা পরিবারকে সহায়তা করেছি এবং টেকনাফ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করি। উদ্ধার অভিযান তাদের সহায়তায় সফল হয়।”

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আরও জানান, “টেকনাফে দীর্ঘদিন ধরে একটি সশস্ত্র অপহরণচক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীদের নিয়ে চক্র গড়ে তুলেছে। বিগত পাঁচ মাসে প্রায় ৫০ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।”

উল্লেখ্য, অপহৃত ছয়জন সবাই জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় রাজমিস্ত্রী। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হলো, যা পরিবারগুলোর জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর। পুলিশের অভিযান এখনও চলমান রয়েছে অপহরণচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে।