ঢাকা ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওরা আমাকে মারলেই পারত

অন্তত শেষবার ছেলের মুখে ‘আব্বা’ ডাকটা শুনতাম

প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
  • আপডেট সময় : ১০:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে

নিহত জাহিদুলের পরিবারের আহাজারি

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (২২) হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তার পরিবার ও গ্রামবাসী। হাসাহাসির মতো তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ভালুকা।

জাহিদুল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ৫ নম্বর বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে। তিনি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দুই তরুণীকে নিয়ে হাসাহাসির জেরে একদল যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ রবিবার দুপুরে জাহিদুলের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ গ্রামে পৌঁছালে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা পারভীন আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার সোনার পুতেরে কেন মারলো? আমার পোলার কী অপরাধ আছিল?” ছেলের লাশের পাশে বসে বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন তিনি।

সকালেই কুয়েত থেকে ছুটে আসেন বাবা জসিম উদ্দিন। ছেলের নিথর দেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “সন্তানের জন্য সব কষ্ট করেছি, বিদেশে রোজগার করে পড়িয়েছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওরা আমাকে মারলেই পারত, অন্তত শেষবার ছেলের মুখে ‘আব্বা’ ডাকটা শুনতাম!”

দুপুর সোয়া চারটায় জানাজা শেষে জাহিদুলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জাহিদুল ইসলাম পারভেজ
জাহিদুল ইসলাম পারভেজ

স্থানীয়রা জানান, জাহিদুল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বাবা জসিম উদ্দিনও ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের ২০০৩ সালের কমিটির সদস্য। ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, “ঢাকায় পড়ালেখা করলেও জাহিদুল এলাকায় এলে আমাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করত। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।”

হত্যার প্রতিবাদে আজ দুপুরে ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের ব্যানারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এতে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

গ্রামবাসী ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের একটাই দাবি—জাহিদুলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ওরা আমাকে মারলেই পারত

অন্তত শেষবার ছেলের মুখে ‘আব্বা’ ডাকটা শুনতাম

আপডেট সময় : ১০:৪৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর বনানীতে ছুরিকাঘাতে নিহত প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (২২) হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তার পরিবার ও গ্রামবাসী। হাসাহাসির মতো তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ভালুকা।

জাহিদুল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ৫ নম্বর বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে। তিনি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে দুই তরুণীকে নিয়ে হাসাহাসির জেরে একদল যুবক তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ রবিবার দুপুরে জাহিদুলের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ গ্রামে পৌঁছালে পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা পারভীন আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “আমার সোনার পুতেরে কেন মারলো? আমার পোলার কী অপরাধ আছিল?” ছেলের লাশের পাশে বসে বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন তিনি।

সকালেই কুয়েত থেকে ছুটে আসেন বাবা জসিম উদ্দিন। ছেলের নিথর দেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, “সন্তানের জন্য সব কষ্ট করেছি, বিদেশে রোজগার করে পড়িয়েছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওরা আমাকে মারলেই পারত, অন্তত শেষবার ছেলের মুখে ‘আব্বা’ ডাকটা শুনতাম!”

দুপুর সোয়া চারটায় জানাজা শেষে জাহিদুলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জাহিদুল ইসলাম পারভেজ
জাহিদুল ইসলাম পারভেজ

স্থানীয়রা জানান, জাহিদুল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বাবা জসিম উদ্দিনও ছিলেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের ২০০৩ সালের কমিটির সদস্য। ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, “ঢাকায় পড়ালেখা করলেও জাহিদুল এলাকায় এলে আমাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করত। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।”

হত্যার প্রতিবাদে আজ দুপুরে ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের ব্যানারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এতে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

গ্রামবাসী ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের একটাই দাবি—জাহিদুলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।