ঢাকা ১১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনীতির মাঠ সরগরম

সিনিয়র প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:২৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে

রাজনীতির মাঠ সরগরম

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে—এই প্রশ্নে বর্তমানে রাজনীতির মাঠ বেশ সরগরম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। পাশাপাশি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরাও নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে মন্তব্য করছেন, যা নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে দলটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং পরবর্তী তিন মাস রাজপথে সক্রিয় থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কিছুটা বদলেছে। তারা পূর্বে ‘যৌক্তিক সময়ের’ কথা বললেও বর্তমানে রমজানের আগেই নির্বাচন দাবি করছে। এই দাবির সঙ্গে তারা তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে: প্রয়োজনীয় সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, সংস্কারবিহীন নির্বাচন নতুন স্বৈরাচারকে উৎসাহিত করতে পারে। এনসিপিও বলছে, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে আপত্তি নেই, তবে তার আগে মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হতে পারে। তবে বিলম্বের উদ্দেশ্য নয়, বরং এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরকে সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলও রোডম্যাপ, সংস্কার এবং নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে সরব। বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা মনে করে, সরকারকে চাপের মধ্যে রাখতে হলে রাজপথে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

যদিও বিএনপি সরকারের সহযোগিতা চায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, তবুও তারা নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণার জন্য চাপ বজায় রাখছে। নির্বাচনের সময়সীমা এক-দেড় মাস পিছিয়ে গেলেও বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।

নির্বাচনী সময় নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ঐক্য থাকলেও, ‘মৌলিক সংস্কার’ ইস্যুতে মতভেদ রয়ে গেছে। এনসিপি যেমন চায়, শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হোক, আবার কেউ কেউ নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার চায় না, বরং নির্বাচিত সরকারকে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে চায়।

বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হবে, সেগুলো এখনই করা সম্ভব। বাকি সংস্কার ভবিষ্যতের নির্বাচিত সংসদে তোলা যাবে। ফলে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব।”

সব মিলিয়ে, রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা বাড়ছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—নির্বাচন হবে কিনা, হলে কখন হবে, আর তাতে কে কতটা ভূমিকা রাখবে, সে নিয়েই এখন মূল লড়াই। দলগুলোর মধ্যে সময় নিয়ে ঘনিষ্ঠতা দেখা গেলেও, মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতার জায়গাটি এখনো দূরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজনীতির মাঠ সরগরম

আপডেট সময় : ১১:২৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে—এই প্রশ্নে বর্তমানে রাজনীতির মাঠ বেশ সরগরম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেমন বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। পাশাপাশি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরাও নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে মন্তব্য করছেন, যা নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে দলটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং পরবর্তী তিন মাস রাজপথে সক্রিয় থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কিছুটা বদলেছে। তারা পূর্বে ‘যৌক্তিক সময়ের’ কথা বললেও বর্তমানে রমজানের আগেই নির্বাচন দাবি করছে। এই দাবির সঙ্গে তারা তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে: প্রয়োজনীয় সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়া।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, সংস্কারবিহীন নির্বাচন নতুন স্বৈরাচারকে উৎসাহিত করতে পারে। এনসিপিও বলছে, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে আপত্তি নেই, তবে তার আগে মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হতে পারে। তবে বিলম্বের উদ্দেশ্য নয়, বরং এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরকে সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলও রোডম্যাপ, সংস্কার এবং নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে সরব। বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা মনে করে, সরকারকে চাপের মধ্যে রাখতে হলে রাজপথে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

যদিও বিএনপি সরকারের সহযোগিতা চায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, তবুও তারা নির্বাচনী রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণার জন্য চাপ বজায় রাখছে। নির্বাচনের সময়সীমা এক-দেড় মাস পিছিয়ে গেলেও বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।

নির্বাচনী সময় নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ঐক্য থাকলেও, ‘মৌলিক সংস্কার’ ইস্যুতে মতভেদ রয়ে গেছে। এনসিপি যেমন চায়, শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হোক, আবার কেউ কেউ নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কার চায় না, বরং নির্বাচিত সরকারকে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে চায়।

বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হবে, সেগুলো এখনই করা সম্ভব। বাকি সংস্কার ভবিষ্যতের নির্বাচিত সংসদে তোলা যাবে। ফলে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব।”

সব মিলিয়ে, রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা বাড়ছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—নির্বাচন হবে কিনা, হলে কখন হবে, আর তাতে কে কতটা ভূমিকা রাখবে, সে নিয়েই এখন মূল লড়াই। দলগুলোর মধ্যে সময় নিয়ে ঘনিষ্ঠতা দেখা গেলেও, মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতার জায়গাটি এখনো দূরে।