ঢাকা ১১:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্ত বাণিজ্যে বড় ধস

ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফে পণ্য আমদানি বন্ধ

প্রতিনিধি, কক্সবাজার
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ৫১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমার

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে ইয়াঙ্গুন শহর থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিগত তিন মাসে এই পথে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফ বন্দরে পৌঁছায়নি। সীমিত আকারে কিছু কাঠপণ্য রাখাইনের মংডু এলাকা থেকে এলেও, মূল আমদানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল উদ্দিন বলেন, “রাখাইন সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্য আনা বন্ধ হয়ে গেছে।”

আরাকান আর্মির ‘ট্যাক্স’ বাধা
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি ইয়াঙ্গুন থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজ থামিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় আমদানিকারকরা। তারা জানান, পণ্য আনতে হলে এখন আরাকান আর্মিকে ‘ট্যাক্স’ দিতে বলা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের পরিপন্থী।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহাদুর বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত এক বছর ধরে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার সংঘর্ষ চলমান। এই যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি সীমান্ত বাণিজ্যে পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “শেষবার গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুন থেকে তিনটি পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফে আসছিল। কিন্তু রাখাইনের নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে আরাকান আর্মি জাহাজগুলো আটকে দেয়। তারপর থেকেই ইয়াঙ্গুন থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে।”

বিকল্প পথে সম্ভাবনা
বাণিজ্য পুনরায় সচল করতে বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। এহেতাশামুল হক জানান, ইয়াঙ্গুন থেকে জাহাজগুলো সাধারণত নাইক্ষ্যংদিয়া হয়ে আসার চেষ্টা করে। কারণ, শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীতে চরের কারণে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যদি জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন হয়ে ঘুরে আসে, তবে আরাকান আর্মির হস্তক্ষেপ এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

সীমিত রপ্তানি ও স্থানীয় দুর্দশা
বর্তমানে সীমিতভাবে মংডু থেকে কিছু কাঠ আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও কিছু আলু ও পানি জাতীয় পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে আগের মতো সরব বাণিজ্য আর নেই।

টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক আলী হোসাইন বলেন, “পাঁচ বছর ধরে বন্দরে কাজ করছি। আগের মতো কাজ নেই। এখন মাঝেমধ্যে কাজ পাই, না পেলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে।”

বন্দরের পাশে চা বিক্রেতা রহমত উল্লাহ বলেন, “বন্দরে যদি লোকজন না আসে, তাহলে আমাদের ব্যবসাও থাকে না। এখন আগের চেয়ে অনেক কম লোক আসে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সীমান্ত বাণিজ্যে বড় ধস

ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফে পণ্য আমদানি বন্ধ

আপডেট সময় : ১১:০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে ইয়াঙ্গুন শহর থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিগত তিন মাসে এই পথে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফ বন্দরে পৌঁছায়নি। সীমিত আকারে কিছু কাঠপণ্য রাখাইনের মংডু এলাকা থেকে এলেও, মূল আমদানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা সোহেল উদ্দিন বলেন, “রাখাইন সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতিতে ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্য আনা বন্ধ হয়ে গেছে।”

আরাকান আর্মির ‘ট্যাক্স’ বাধা
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি ইয়াঙ্গুন থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজ থামিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় আমদানিকারকরা। তারা জানান, পণ্য আনতে হলে এখন আরাকান আর্মিকে ‘ট্যাক্স’ দিতে বলা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের পরিপন্থী।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহাদুর বলেন, “মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত এক বছর ধরে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার সংঘর্ষ চলমান। এই যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি সীমান্ত বাণিজ্যে পড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “শেষবার গত ১৬ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুন থেকে তিনটি পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফে আসছিল। কিন্তু রাখাইনের নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে আরাকান আর্মি জাহাজগুলো আটকে দেয়। তারপর থেকেই ইয়াঙ্গুন থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে।”

বিকল্প পথে সম্ভাবনা
বাণিজ্য পুনরায় সচল করতে বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। এহেতাশামুল হক জানান, ইয়াঙ্গুন থেকে জাহাজগুলো সাধারণত নাইক্ষ্যংদিয়া হয়ে আসার চেষ্টা করে। কারণ, শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীতে চরের কারণে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যদি জাহাজগুলো সেন্টমার্টিন হয়ে ঘুরে আসে, তবে আরাকান আর্মির হস্তক্ষেপ এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

সীমিত রপ্তানি ও স্থানীয় দুর্দশা
বর্তমানে সীমিতভাবে মংডু থেকে কিছু কাঠ আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও কিছু আলু ও পানি জাতীয় পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে আগের মতো সরব বাণিজ্য আর নেই।

টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক আলী হোসাইন বলেন, “পাঁচ বছর ধরে বন্দরে কাজ করছি। আগের মতো কাজ নেই। এখন মাঝেমধ্যে কাজ পাই, না পেলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে।”

বন্দরের পাশে চা বিক্রেতা রহমত উল্লাহ বলেন, “বন্দরে যদি লোকজন না আসে, তাহলে আমাদের ব্যবসাও থাকে না। এখন আগের চেয়ে অনেক কম লোক আসে।”