ঢাকা ০১:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:২৮:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে

বাজেট

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করছে, যা চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। উন্নয়ন ব্যয়ে কাটছাঁট করায় বাজেটের মোট আকার কমানো হচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতি ও সরকারি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বাজেটকে বাস্তবায়নযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও বাজেট কমছে, তবে সমাজের বৈষম্য কমানো ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ প্রস্তাবিত বাজেট আকার নির্ধারণ করা হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের ৬.৭৫ শতাংশের তুলনায় কম। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি এই প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কম দিয়েছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে, যদিও গত মার্চে এটি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ।

চলতি ধারা থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেটের আকার সংকোচন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার তুলনায় কম। এ ঘাটতির একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে পূরণ করা হবে, বাকি অংশ আসবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে।

পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি বাজেটে তা ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বিপরীতে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকতে পারে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।

পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক গ্রহণকৃত বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন মেগা প্রকল্প না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া কিছু প্রকল্প বাতিল হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যার ফলে উন্নয়ন খাতে ব্যয়ও হ্রাস পাচ্ছে।

রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় ও বৈদেশিক অনুদান হ্রাস পাওয়ায় বাজেট পরিকল্পনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে, এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে রাজস্ব ঘাটতির কারণে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।

সার্বিকভাবে, নতুন বাজেট বাস্তবধর্মী ও টেকসই করতে চাওয়া হচ্ছে, যাতে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা পায় এবং সাধারণ জনগণের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমানো যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসছে

আপডেট সময় : ১০:২৮:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করছে, যা চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। উন্নয়ন ব্যয়ে কাটছাঁট করায় বাজেটের মোট আকার কমানো হচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতি ও সরকারি ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে বাজেটকে বাস্তবায়নযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও বাজেট কমছে, তবে সমাজের বৈষম্য কমানো ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ প্রস্তাবিত বাজেট আকার নির্ধারণ করা হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের ৬.৭৫ শতাংশের তুলনায় কম। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবি এই প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কম দিয়েছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে, যদিও গত মার্চে এটি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ।

চলতি ধারা থেকে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেটের আকার সংকোচন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার তুলনায় কম। এ ঘাটতির একটি বড় অংশ বিদেশি ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে পূরণ করা হবে, বাকি অংশ আসবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে।

পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি বাজেটে তা ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বিপরীতে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকতে পারে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।

পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক গ্রহণকৃত বেশিরভাগ মেগা প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন মেগা প্রকল্প না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া কিছু প্রকল্প বাতিল হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যার ফলে উন্নয়ন খাতে ব্যয়ও হ্রাস পাচ্ছে।

রাজস্ব আহরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না থাকায় ও বৈদেশিক অনুদান হ্রাস পাওয়ায় বাজেট পরিকল্পনায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে, এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে রাজস্ব ঘাটতির কারণে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।

সার্বিকভাবে, নতুন বাজেট বাস্তবধর্মী ও টেকসই করতে চাওয়া হচ্ছে, যাতে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা পায় এবং সাধারণ জনগণের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমানো যায়।