ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোস্ট গার্ডের সাঁড়াশি অভিযান

সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট)
  • আপডেট সময় : ১০:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বনদস্যু আতঙ্ক। এক সময় আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের কারণে শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই বনাঞ্চলে আবারও নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে জেলে, বাওয়ালি ও বনজীবীদের মধ্যে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যাওয়া থেকে অনেকেই বিরত থাকছেন। তবে কোস্ট গার্ডের ধারাবাহিক অভিযান কিছুটা স্বস্তি দিলেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছে না বনজীবীরা।

আত্মসমর্পণ করেও থামেনি দস্যুতা
বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট তিন দফায় শতাধিক বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। ২০১৬ সালে ৩২ জন, ২০১৮ সালে ৫৭ জন এবং ২০১৯ সালে আরও ২৫ জন আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করেন। তখন সুন্দরবন ধীরে ধীরে দস্যুমুক্ত হওয়ার পথে এগোচ্ছিল।

নতুন করে দস্যু বাহিনীর উত্থান
তবে সুন্দরবনে গত তিন মাসে অন্তত ২০ জন জেলে ও মৌয়াল অপহরণের শিকার হয়েছেন। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ঘটনায় আবারও নতুন বনদস্যু বাহিনীর সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। কোস্ট গার্ডের কয়েকটি অভিযানে অপহৃতদের উদ্ধার করা গেলেও দস্যু আতঙ্ক কাটেনি।

বনের অভ্যন্তরে করিম শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনীসহ অন্তত ৫ থেকে ৭টি নতুন বনদস্যু দল সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদের আস্তানা রয়েছে বনের বিভিন্ন পয়েন্টে। সুযোগ পেলেই মাছ ধরার ট্রলার বা বনজীবীদের অপহরণ করে এরা। মুক্তিপণ না দিলে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।

সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক
সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা ও উদ্বেগ
রামপাল উপজেলার এক জেলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “দয়াল বাহিনী খুবই ভয়ঙ্কর। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ট্রলারে হামলা করে। কেউ মুক্তিপণ না দিতে পারলে, নির্মমভাবে নির্যাতন করে নদীতে ফেলে দেয়।”

সেভ দ্য সুন্দরবনের প্রস্তাবনা
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বনজীবীদের ছদ্মবেশে এসব দস্যুরা সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে। এদের ডাটাবেজ তৈরি করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি, পরিবার পর্যবেক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো জরুরি।”

তার মতে, সুন্দরবনের দস্যুতা এখন শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটেরও পূর্বাভাস।

সফল উদ্ধার অভিযান
গত ১০ এপ্রিল সুন্দরবনের গহীন অঞ্চল থেকে করিম শরীফ বাহিনীর হাত থেকে ৬ নারীসহ ৩৩ জন জেলেকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। একইসাথে, দস্যুদের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ ও কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মাহবুব হোসেন বলেন, “দস্যু দমনে কোস্ট গার্ড অতীতেও সক্রিয় ছিল, বর্তমানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কোস্ট গার্ডের সাঁড়াশি অভিযান

সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক

আপডেট সময় : ১০:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বনদস্যু আতঙ্ক। এক সময় আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের কারণে শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই বনাঞ্চলে আবারও নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে জেলে, বাওয়ালি ও বনজীবীদের মধ্যে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন করে বনদস্যুদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যাওয়া থেকে অনেকেই বিরত থাকছেন। তবে কোস্ট গার্ডের ধারাবাহিক অভিযান কিছুটা স্বস্তি দিলেও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছে না বনজীবীরা।

আত্মসমর্পণ করেও থামেনি দস্যুতা
বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট তিন দফায় শতাধিক বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে। ২০১৬ সালে ৩২ জন, ২০১৮ সালে ৫৭ জন এবং ২০১৯ সালে আরও ২৫ জন আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করেন। তখন সুন্দরবন ধীরে ধীরে দস্যুমুক্ত হওয়ার পথে এগোচ্ছিল।

নতুন করে দস্যু বাহিনীর উত্থান
তবে সুন্দরবনে গত তিন মাসে অন্তত ২০ জন জেলে ও মৌয়াল অপহরণের শিকার হয়েছেন। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ঘটনায় আবারও নতুন বনদস্যু বাহিনীর সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। কোস্ট গার্ডের কয়েকটি অভিযানে অপহৃতদের উদ্ধার করা গেলেও দস্যু আতঙ্ক কাটেনি।

বনের অভ্যন্তরে করিম শরীফ বাহিনী, দয়াল বাহিনীসহ অন্তত ৫ থেকে ৭টি নতুন বনদস্যু দল সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদের আস্তানা রয়েছে বনের বিভিন্ন পয়েন্টে। সুযোগ পেলেই মাছ ধরার ট্রলার বা বনজীবীদের অপহরণ করে এরা। মুক্তিপণ না দিলে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।

সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক
সুন্দরবনে নতুন বনদস্যু আতঙ্ক

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা ও উদ্বেগ
রামপাল উপজেলার এক জেলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “দয়াল বাহিনী খুবই ভয়ঙ্কর। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ট্রলারে হামলা করে। কেউ মুক্তিপণ না দিতে পারলে, নির্মমভাবে নির্যাতন করে নদীতে ফেলে দেয়।”

সেভ দ্য সুন্দরবনের প্রস্তাবনা
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বনজীবীদের ছদ্মবেশে এসব দস্যুরা সুন্দরবনে ঢুকে পড়ে। এদের ডাটাবেজ তৈরি করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি, পরিবার পর্যবেক্ষণ, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো জরুরি।”

তার মতে, সুন্দরবনের দস্যুতা এখন শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটেরও পূর্বাভাস।

সফল উদ্ধার অভিযান
গত ১০ এপ্রিল সুন্দরবনের গহীন অঞ্চল থেকে করিম শরীফ বাহিনীর হাত থেকে ৬ নারীসহ ৩৩ জন জেলেকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড। একইসাথে, দস্যুদের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ ও কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মাহবুব হোসেন বলেন, “দস্যু দমনে কোস্ট গার্ড অতীতেও সক্রিয় ছিল, বর্তমানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।”