গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো কবি রফিক আজাদের স্মৃতিবাহী বাড়ির একাংশ

- আপডেট সময় : ০৪:১৭:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে

প্রয়াত কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের ধানমণ্ডির স্মৃতিস্মারক বাড়ির একাংশ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন দশক ধরে এই বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করেছেন রফিক আজাদ, যেখানে বসেই তিনি লিখেছেন ২০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ।
বুধবার সকাল থেকেই ১৩৯/৪এ, ধানমণ্ডি ১ নম্বর সড়কের পূর্বাংশের দুটি ইউনিট ভাঙার কাজ শুরু হয়। বাড়িটির চারটি ইউনিটের মধ্যে একটিতে এখনও বসবাস করছেন কবির স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজ। বাকি ইউনিটগুলো অন্যদের নামে বরাদ্দ ছিল।
এই বাড়িটি মূলত ১৯৮৮ সালে দিলারা হাফিজের নামে সাময়িক বরাদ্দ দেয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সে সময় তিনি ইডেন কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বরাদ্দনামায় উল্লেখ ছিল, কোনো স্থায়ী অধিকার না থাকলেও পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি থাকবে।
তবে দীর্ঘদিন পর, ২০১২ সালে সৈয়দ নেহাল আহাদ নামের এক ব্যক্তি বাড়িটির মালিকানা দাবি করেন এবং আদালত থেকে রায়ও পান। পরে দিলারা হাফিজ মালিকানা ও উচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন, যার ফলে আদালত বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং পরবর্তী বছর তা স্থায়ী করা হয়।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সপ্তম সহকারী জজ আদালতে চলমান, এবং আগামী ২৫ মে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দিলারা হাফিজ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে স্থায়ী বন্দোবস্তের আবেদন করেন।
কিন্তু আদালতের স্থিতাবস্থা এবং মামলার প্রক্রিয়া চলমান থাকা সত্ত্বেও বুধবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
দিলারা হাফিজ বলেন, “জাতীয় জীবনে একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের স্মৃতি রক্ষার জন্য আমি বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু মামলা চলতে থাকা অবস্থায় এভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে—তা কখনো ভাবিনি।”
তিনি আরও জানান, তিনি সর্বশেষ সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর নেন। বর্তমানে কবির দুই সন্তান অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ প্রবাসে অবস্থান করছেন।
কবি রফিক আজাদের এই বাড়িটি কেবল একটি আবাসস্থল নয়, বরং বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির এক জীবন্ত স্মারক ছিল বলে মনে করছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।