ঢাকা ১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরাকান আর্মির তৎপরতা: পাঁচ মাসে দেড় শতাধিক জেলে অপহরণ

নুরুল বশর, উখিয়া (কক্সবাজার)
  • আপডেট সময় : ১০:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে

আরাকান আর্মির তৎপরতা

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি জেলে। গত পাঁচ মাসে এসব ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে আতঙ্কে পড়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের অন্তত ৪০০ ট্রলারের প্রায় ৩ হাজার জেলে।

সরকারঘোষিত ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সোমবার (১৪ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে কার্যকর হলেও, তার আগেই জেলেরা আরাকান আর্মির ভয়াবহ তৎপরতার কারণে নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তাদের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।

বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে নাফ নদীজুড়ে ৮৪ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে। এই নদীতে গত তিন মাস ধরে আরাকান আর্মির টহল ও অপহরণ বেড়ে গেছে। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল, সেন্ট মার্টিনের কাছে মৌলভীরশীল এলাকায় বাংলাদেশ জলসীমা থেকে চারটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২৩ জন মাঝিমাল্লাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন দখলের পর থেকে আরাকান আর্মির তৎপরতা বাড়ে। এখন পর্যন্ত ১৫১ জন জেলেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিজিবির উদ্যোগে ১৩৪ জনকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি জেলেদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অপহৃত ২৩ জন জেলে সম্পর্কেও খুব শিগগিরই ভালো খবর পাওয়া যাবে।

ট্রলারমালিকরা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা দ্রুতগামী স্পিডবোটে করে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছে এবং জেলেদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করছে। যদিও বিজিবি তৎপর রয়েছে, কিন্তু অপহরণের ঘটনা থামছে না।

সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরা কয়েকজন জেলে জানান, আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক গড়তে চায়, আর এই কারণেই তারা জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এক ধরনের ‘সংকেত’ হিসেবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রাখাইন রাজ্য দখলের পর থেকেই আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌচলাচল ও মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জেলেদের মিয়ানমারের জলসীমায় না ঢোকার বিষয়ে সতর্ক করা হলেও অপহরণ থেমে নেই। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতা, অপহরণের আশঙ্কা ও জীবনের ঝুঁকির কারণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের আশপাশের জেলেরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে শুধু তারা নয়, গোটা উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি এবং মাছভিত্তিক জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আরাকান আর্মির তৎপরতা: পাঁচ মাসে দেড় শতাধিক জেলে অপহরণ

আপডেট সময় : ১০:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি জেলে। গত পাঁচ মাসে এসব ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে আতঙ্কে পড়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের অন্তত ৪০০ ট্রলারের প্রায় ৩ হাজার জেলে।

সরকারঘোষিত ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সোমবার (১৪ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে কার্যকর হলেও, তার আগেই জেলেরা আরাকান আর্মির ভয়াবহ তৎপরতার কারণে নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তাদের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।

বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে ২৭১ কিলোমিটারের মধ্যে নাফ নদীজুড়ে ৮৪ কিলোমিটার জলসীমা রয়েছে। এই নদীতে গত তিন মাস ধরে আরাকান আর্মির টহল ও অপহরণ বেড়ে গেছে। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল, সেন্ট মার্টিনের কাছে মৌলভীরশীল এলাকায় বাংলাদেশ জলসীমা থেকে চারটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ২৩ জন মাঝিমাল্লাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান জানান, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন দখলের পর থেকে আরাকান আর্মির তৎপরতা বাড়ে। এখন পর্যন্ত ১৫১ জন জেলেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিজিবির উদ্যোগে ১৩৪ জনকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি জেলেদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অপহৃত ২৩ জন জেলে সম্পর্কেও খুব শিগগিরই ভালো খবর পাওয়া যাবে।

ট্রলারমালিকরা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা দ্রুতগামী স্পিডবোটে করে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছে এবং জেলেদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করছে। যদিও বিজিবি তৎপর রয়েছে, কিন্তু অপহরণের ঘটনা থামছে না।

সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরা কয়েকজন জেলে জানান, আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক গড়তে চায়, আর এই কারণেই তারা জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এক ধরনের ‘সংকেত’ হিসেবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রাখাইন রাজ্য দখলের পর থেকেই আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌচলাচল ও মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জেলেদের মিয়ানমারের জলসীমায় না ঢোকার বিষয়ে সতর্ক করা হলেও অপহরণ থেমে নেই। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতা, অপহরণের আশঙ্কা ও জীবনের ঝুঁকির কারণে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের আশপাশের জেলেরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে শুধু তারা নয়, গোটা উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি এবং মাছভিত্তিক জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।