ঢাকা ০৯:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি

মোঃ মনিরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামী ১৬ এপ্রিল (বুধবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।

বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ভিন্নমুখী বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কখনো ডিসেম্বর, আবার কখনো ২০২৬ সালের জুন—এই সময়সীমা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আসা পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে এবং একটি নির্ধারিত সময়সীমা জানতে সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা জরুরি বলে মনে করছে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। মনে করেছিলাম, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে লক্ষ্যেই কার্যক্রম চালাবে। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি বিভ্রান্তিকর।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, আবার বলেছেন জুনেও হতে পারে। কিন্তু জুন তো বর্ষাকাল, তখন নির্বাচন বাস্তবসম্মত নয়। তাই আমরা তার কাছে গিয়ে জানতে চাইব—আসলে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাটা কী?”

বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, “নির্বাচন কমিশন তো প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিসেম্বরের জন্য। তাহলে এখন হঠাৎ করে জুনের প্রসঙ্গ কেন আসছে? বড় বা ছোট সংস্কার বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, সেটাও পরিষ্কার নয়। আমরা চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “১৬ তারিখের বৈঠকের পরই আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। আলোচনার ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।”

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মনোভাব সন্তোষজনক না হলে দলটি আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন রূপরেখা নির্ধারণ করবে। এ জন্য জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সমাবেশ, মানববন্ধনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি—সব কিছুই নির্ভর করছে বৈঠকের ফলাফলের ওপর।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে, ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু থেকেই বিএনপি ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। তবে তাদের একটাই দাবি—প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী জাতীয় নির্বাচন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি বড় পরিসরের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনে হতে পারে। আর যদি সীমিত সংস্কার হয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের পরে কোনো নির্বাচন তারা মেনে নেবে না।

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ এপ্রিলের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যদি একটি নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেন, তাহলে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে। অন্যথায়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পথে হাঁটবে তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায় বিএনপি

আপডেট সময় : ০৩:৪৩:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তখন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামী ১৬ এপ্রিল (বুধবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল।

বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের ভিন্নমুখী বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কখনো ডিসেম্বর, আবার কখনো ২০২৬ সালের জুন—এই সময়সীমা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আসা পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে এবং একটি নির্ধারিত সময়সীমা জানতে সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা জরুরি বলে মনে করছে দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। মনে করেছিলাম, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে লক্ষ্যেই কার্যক্রম চালাবে। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি বিভ্রান্তিকর।”

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, আবার বলেছেন জুনেও হতে পারে। কিন্তু জুন তো বর্ষাকাল, তখন নির্বাচন বাস্তবসম্মত নয়। তাই আমরা তার কাছে গিয়ে জানতে চাইব—আসলে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাটা কী?”

বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন তোলেন, “নির্বাচন কমিশন তো প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিসেম্বরের জন্য। তাহলে এখন হঠাৎ করে জুনের প্রসঙ্গ কেন আসছে? বড় বা ছোট সংস্কার বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, সেটাও পরিষ্কার নয়। আমরা চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “১৬ তারিখের বৈঠকের পরই আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। আলোচনার ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।”

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মনোভাব সন্তোষজনক না হলে দলটি আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন রূপরেখা নির্ধারণ করবে। এ জন্য জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সমাবেশ, মানববন্ধনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচির প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি—সব কিছুই নির্ভর করছে বৈঠকের ফলাফলের ওপর।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে, ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরু থেকেই বিএনপি ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। তবে তাদের একটাই দাবি—প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী জাতীয় নির্বাচন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি বড় পরিসরের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনে হতে পারে। আর যদি সীমিত সংস্কার হয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের পরে কোনো নির্বাচন তারা মেনে নেবে না।

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ এপ্রিলের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যদি একটি নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেন, তাহলে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে। অন্যথায়, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পথে হাঁটবে তারা।