ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মেঘনা আলমকে আটকের রাতেই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:০০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে

সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনা আলম

দৈনিক দেশ আমার অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের একটি অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে আটক করেছে পুলিশ। একই দিন রাতে রাষ্ট্রদূত ঢাকা ত্যাগ করেন। আটক মেঘনাকে আদালতের আদেশে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ ছিল, মেঘনা আলম তাঁর সঙ্গে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং বুধবার রাতেই রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘনাকে আটক করে।

আটকের আগে মেঘনা আলম ফেসবুক লাইভে এসে জানান, ‘পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ তাঁর বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন। লাইভে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ তোলেন। তবে আটক হওয়ার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে তাঁর প্রোফাইল থেকেও ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিবৃতিতে জানায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে অপপ্রচার এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর অভিযোগে মেঘনাকে “নিরাপত্তা হেফাজতে” নেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করে, বিষয়টি আইনানুগভাবেই হয়েছে এবং অপহরণের অভিযোগ সঠিক নয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, তদন্তে মেঘনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সামির নামেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা আল দুহাইলান ঢাকায় তাঁর দায়িত্ব শেষে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন যে, একজন নারী তাঁর বিরুদ্ধে চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মেঘনার পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়।

পুলিশ সূত্রে আরও জানায়, তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন মেঘনার বিদেশি কূটনৈতিক মহলে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর কোনো ভিডিও বা তথ্য রয়েছে কি না।

অভিনেত্রী মেঘলা আলম
অভিনেত্রী মেঘলা আলম

মেঘনার ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত তাঁর লোকদের দিয়ে কয়েকজনকে তুলে নিয়েছেন এবং তাঁকে হুমকি দিয়েছেন যেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে কিছু না লেখেন। তিনি দাবি করেন, সরকার রাষ্ট্রদূতের পক্ষ নিচ্ছেন এবং তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আটকের পর মেঘনাকে বৃহস্পতিবার রাতে আদালতে হাজির করা হলে, পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩০ দিনের আটকাদেশ মঞ্জুর করেন।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় নেওয়া এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা এবং তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার ঘটনা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

এ ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে স্বচ্ছ তদন্ত ও মেঘনা আলমকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে। বিষয়টি ঘিরে এখন নজর রয়েছে সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও কূটনৈতিক অঙ্গনের ওপর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মেঘনা আলমকে আটকের রাতেই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত

আপডেট সময় : ১২:০০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের একটি অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে মডেল ও অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে আটক করেছে পুলিশ। একই দিন রাতে রাষ্ট্রদূত ঢাকা ত্যাগ করেন। আটক মেঘনাকে আদালতের আদেশে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ ছিল, মেঘনা আলম তাঁর সঙ্গে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং বুধবার রাতেই রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসা থেকে মেঘনাকে আটক করে।

আটকের আগে মেঘনা আলম ফেসবুক লাইভে এসে জানান, ‘পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ তাঁর বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন। লাইভে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সরাসরি রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ তোলেন। তবে আটক হওয়ার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে তাঁর প্রোফাইল থেকেও ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিবৃতিতে জানায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে অপপ্রচার এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর অভিযোগে মেঘনাকে “নিরাপত্তা হেফাজতে” নেওয়া হয়েছে। তারা দাবি করে, বিষয়টি আইনানুগভাবেই হয়েছে এবং অপহরণের অভিযোগ সঠিক নয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, তদন্তে মেঘনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সামির নামেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা আল দুহাইলান ঢাকায় তাঁর দায়িত্ব শেষে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন যে, একজন নারী তাঁর বিরুদ্ধে চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মেঘনার পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়।

পুলিশ সূত্রে আরও জানায়, তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন মেঘনার বিদেশি কূটনৈতিক মহলে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এবং রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর কোনো ভিডিও বা তথ্য রয়েছে কি না।

অভিনেত্রী মেঘলা আলম
অভিনেত্রী মেঘলা আলম

মেঘনার ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত তাঁর লোকদের দিয়ে কয়েকজনকে তুলে নিয়েছেন এবং তাঁকে হুমকি দিয়েছেন যেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে কিছু না লেখেন। তিনি দাবি করেন, সরকার রাষ্ট্রদূতের পক্ষ নিচ্ছেন এবং তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আটকের পর মেঘনাকে বৃহস্পতিবার রাতে আদালতে হাজির করা হলে, পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩০ দিনের আটকাদেশ মঞ্জুর করেন।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় নেওয়া এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার ও নারী অধিকারকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের অনানুষ্ঠানিক অভিযোগের ভিত্তিতে একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা এবং তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার ঘটনা স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

এ ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে স্বচ্ছ তদন্ত ও মেঘনা আলমকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবি উঠেছে। বিষয়টি ঘিরে এখন নজর রয়েছে সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও কূটনৈতিক অঙ্গনের ওপর।