পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবের শুভ সূচনা

- আপডেট সময় : ১২:১৮:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে

পাহাড়ি জনপদে শুরু হয়েছে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্যতম বৃহৎ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব—বৈসাবি। এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়জুড়ে বইছে আনন্দের উচ্ছ্বাস। ভোর সকালেই তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বমসহ ১১টি জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী ও শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে সাঙ্গু নদীর তীরে জড়ো হন। কলাপাতায় ফুল সাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, নদীতে ফুল ভাসিয়ে অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাঁরা।
এই ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু, বৈসু, বিষু ও সাংগ্রাই নামের উৎসবগুলোর সম্মিলিত রূপ ‘বৈসাবি’র আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে। নদীর স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাক জীবনের গ্লানি আর কষ্ট—এই প্রার্থনায় মুখর ছিল সাঙ্গু নদীর ঘাট। নতুন বছরের আগমনে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় মা গঙ্গাদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনা নিবেদন করেন তারা।
বান্দরবানের সাতকমল পাড়ার আশিষ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়েই বিজুর সূচনা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে এখন উৎসবের আমেজ, পাজন রান্না হচ্ছে, মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা।”
তরুণী হ্যাপী চাকমা বলেন, “বছরজুড়ে এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। আমাদের সংস্কৃতি, আনন্দ আর ঐক্যের প্রতিচ্ছবি এই বিজু উৎসব।”
বিজু উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নাজীত তঞ্চঙ্গ্যা জানান, “নদীতে ফুল বিসর্জনের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী বিজুর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। এবছর উৎসব আরও বড় পরিসরে ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে।”

আজ সন্ধ্যায় রেইছা হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ঘিলা খেলা—যেখানে তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষজন অংশ নেবেন নানা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। পরদিন পাজন রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন এবং ঘরে ঘরে উৎসব উদযাপন হবে। ছোটরা গুরুজনদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেবে এবং মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করবে।
বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় একসাথে উদযাপিত এই উৎসব আদিবাসী সমাজের জন্য শুধু আনন্দ নয়, বরং তাদের আত্মপরিচয়ের এক গর্বিত বহিঃপ্রকাশ।
বান্দরবান জেলা উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বৈসাবি উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে সাংগ্রাই লোকজ ক্রীড়া উৎসব, বর্ণাঢ্য র্যালি, বুদ্ধস্নান, পাড়া ভিত্তিক পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে চড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মৈত্রীয় পানি বর্ষণ উৎসব।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনও প্রস্তুত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল করিম জানান, “বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিটি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সাদা পোশাকে টহলসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।”
বৈসাবি এখন শুধুই উৎসব নয়—এটি পাহাড়ের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রাণপ্রবাহ।