লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড স্টাইলে মেঘনা আলমকে আটক

- আপডেট সময় : ১০:২৫:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে

উদ্যোক্তা ও মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড স্টাইলে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী জার্নাল রাষ্ট্রচিন্তা। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে তারা এই ঘটনাকে নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মেঘনা আলমকে যেভাবে রাতে পরিচয় গোপন করে আটক করা হয়েছে—যা পরে বিভিন্ন বাহিনীর পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে আরও বিভ্রান্তিকর রূপ নেয়—তা রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মারাত্মক ঘাটতি প্রকাশ করে। প্রথমে পুলিশ পরিচয় গোপন, পরে মাদকের অভিযোগ, আবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায় অস্বীকার—সব মিলে এটিকে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ ধরনের নিখোঁজ নাটক বলে মনে হচ্ছে।”
রাষ্ট্রচিন্তা আরও বলেছে, মেঘনা আলমকে আটক করা হয়েছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও অপব্যবহৃত একটি আইন। “এই আইন এক সময় স্বৈরশাসনের হাতিয়ার ছিল। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও এই আইনের ছত্রছায়ায় গুম, নিখোঁজ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এখনো এই আইন ব্যবহার করে মানুষকে গায়েব করে জেলে পাঠানো হয়—যাকে অনেকেই ‘আইনানুগ গুম’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।”
বিবৃতিতে এ আইনকে সরাসরি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলা হয়, “বর্তমান সময়ে এই আইন টিকে থাকা কেবল অমানবিক নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আত্মবিরোধিতার প্রকাশ।”
রাষ্ট্রচিন্তা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, এ ঘটনার পেছনে একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত প্রভাব ও প্রতিহিংসার অভিযোগ উঠেছে, যা দেশের কূটনৈতিক সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। “রাষ্ট্র যদি এতে নীরব থাকে, তবে সেটি হবে আত্মঘাতী অবহেলা এবং কূটনৈতিক দুর্বলতার প্রকাশ।”

ঘটনার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রচিন্তা চার দফা দাবি উত্থাপন করেছে:
মেঘনা আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তবে প্রচলিত আইনের আওতায় স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বিলুপ্ত করতে হবে। এই আইন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং রাষ্ট্রীয় জবাবদিহির বড় বাধা।
ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যক্তিগত বা কূটনৈতিক প্রতিহিংসার যন্ত্র হতে পারে না।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তার কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
বিবৃতির শেষাংশে রাষ্ট্রচিন্তা স্পষ্ট করে বলেছে, “একটি রাষ্ট্র তখনই প্রকৃতভাবে মর্যাদাপূর্ণ হয়, যখন সে তার দুর্বলতম নাগরিকেরও অধিকার রক্ষা করে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অন্ধ অপব্যবহার কেবল আইনি অপরাধ নয়—এটি একটি ভয়ানক নৈতিক ব্যর্থতা, যার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”