বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় হাসিনার ‘মুখাকৃতি’

- আপডেট সময় : ০৮:৩৬:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার নাম এ বছর পরিবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিনের পরিচিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি আর থাকছে না। বিতর্ক, সমালোচনা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে এবার এই শোভাযাত্রার নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
জুলাই বিপ্লবের পর এবারই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে শোভাযাত্রার মোটিফগুলোতেও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও প্রতীকী বার্তা। আয়োজনে থাকছে বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের নানা মোটিফ। এর মধ্যে বড় মোটিফ থাকবে ছয়টি।
সবচেয়ে আলোচিত মোটিফটি হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। দাঁতাল এক নারীমুখ এবং মাথায় খাড়া দু’টি শিংসহ এই প্রতিকৃতিটি শোভাযাত্রার অগ্রভাগে থাকবে। এই মুখাকৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে, অনেকেই একে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপক মনে করছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি দেখে কেউ যদি কারো সঙ্গে মিল খুঁজে পান, তা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা সামগ্রিকভাবে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান তুলে ধরছি।”
শোভাযাত্রার অন্য বড় মোটিফগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ‘৩৬ জুলাই’ শিরোনামে একটি টাইপোগ্রাফিক মোটিফ, শান্তির প্রতীক পায়রা, ঐতিহ্যবাহী পালকি এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর স্মরণে পানির বোতল। এই বোতলটি রড দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, যার উচ্চতা ১৫ ফুট। বোতলের ভেতরে থাকবে অসংখ্য খালি বোতল, যা আন্দোলনে নিহতদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এছাড়া পুরো শোভাযাত্রা জুড়ে থাকবে আরও নানা রকম লোকজ ও রাজনৈতিক মোটিফ। সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ফ্যাসিবাদের প্রতীকী মুখাকৃতির অনেকগুলো পুনরাবৃত্তি, রঙিন চরকি, বাঘের মাথা, তালপাতার সেপাই, পাখা, মাছ ধরার চাই, পলো, তুহিন পাখি, মাথাল, ঘোড়া, লাঙল, মাছের ডোলা—সব মিলিয়ে শতাধিক উপাদানে সাজানো হচ্ছে এবারের আনন্দ শোভাযাত্রা।
চারুকলা অনুষদের সামনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ির মোটিফ। জয়নুল শিশু নিকেতনের দেয়ালে চিত্রিত হচ্ছে সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী মাটির দেয়াল চিত্ররীতি।
বিশ্ব রাজনীতির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এবারের শোভাযাত্রায় থাকছে আরও একটি শক্তিশালী বার্তা। ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে রাখা হচ্ছে তরমুজের মোটিফ—যা গত এক দশকে বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সব মিলিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা একদিকে যেমন লোকজ সংস্কৃতির রঙে রঙিন, তেমনি তা হয়ে উঠছে প্রতিবাদ ও প্রতীকীর এক জোরালো বহিঃপ্রকাশ।