আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
ঈদের ছুটিতে খুলনায় সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব

- আপডেট সময় : ১১:৪৭:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ এপ্রিল ২০২৫ ৩৪ বার পড়া হয়েছে

খুলনায় ঈদের ছুটিকে ঘিরে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে হামলা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের গুলিবর্ষণ, দোকান লুট, বাড়িতে হামলা—সব মিলিয়ে শহরজুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাসীরা খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এম নূরুল ইসলামের ব্যবুখান রোডের বাড়িতে হামলা চালায়। মোটরসাইকেলে করে আসা পাঁচ-ছয়জন যুবক রাত ১০টার দিকে চিৎকার করতে করতে গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং গ্যারেজে রাখা প্রাইভেটকার কুপিয়ে টায়ার নষ্ট করে দেয়। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায় বলে জানান মরহুম এম নূরুল ইসলামের ছেলে আরিফুল ইসলাম লুনিক।
ঈদের দিন সোমবার সন্ধ্যায় রূপসা উপজেলার বামণডাঙ্গা বাজারে দুলাল ফকিরের দোকানে হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। স্থানীয়দের মতে, গ্রামের দুই যুবকের ঝগড়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে। ১৫-২০ জনের একটি দল দোকানে হামলা চালিয়ে দুলাল ফকিরকে কুপিয়ে জখম করে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে একই সন্ত্রাসীরা আবার তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
রূপসা উপজেলার বাগমারা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় রবিবার সন্ধ্যায় রুবেল নামে এক যুবককে গুলি করার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। তবে মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের উপস্থিতি দেখে তারা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। রুবেলকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই দিন রামনগর এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রবিউল হক রবি নামের আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়, গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার বাম হাতে বিদ্ধ হয়।
এছাড়া রবিবার রাত ১১টার দিকে নগরীর জাহিদুর রহমান সড়ক থেকে পুলিশ মো. রুবেল খান নামে এক যুবককে বিদেশি রিভলবার ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে। পুলিশের ভাষ্যমতে, রুবেল খান চেকপোস্টে অস্বাভাবিক আচরণ করায় সন্দেহের ভিত্তিতে তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
সবচেয়ে বড় অভিযানটি ঘটে শনিবার রাত ১২টার দিকে নগরীর আরামবাগ এলাকায়, যেখানে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তিন ঘণ্টাব্যাপী গুলিবিনিময় হয়। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালাতে গেলে পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে রয়েছে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ শেখ, তার সহযোগী কালা লাভলু, লিয়ন শরীফ, ট্যাটু ইমরানসহ অন্যান্যরা।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি শটগান ও ২৩ রাউন্ড গুলি, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র, মোট সাতটি মোটরসাইকেল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার আজম খান জানান, গ্রেফতারকৃত পলাশ শেখের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্র এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ। তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে খুলনাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা বাড়ছে। সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
One thought on “ঈদের ছুটিতে খুলনায় সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব”