রোহিঙ্গা ফেরত নিতে সম্মত মিয়ানমার

- আপডেট সময় : ১১:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরত নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে যে ছয়টি তালিকা প্রদান করা হয়, সেখান থেকে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটি।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে এক বৈঠকে এ তথ্য জানান মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিউ। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এত বড় সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকার এই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিলো।”
তালিকাভুক্ত বাকি প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার। এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই এখনো চলমান রয়েছে, যাদের ছবি ও নামের ভিত্তিতে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। যাচাই সম্পন্ন হলে এদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈঠকে ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যদিও বাস্তবায়নের পথ এখনো দীর্ঘ, তবে কূটনৈতিক পর্যায়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি উত্তেজনাকর ইস্যু হিসেবে রয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক মহলও বহুবার এর দ্রুত সমাধান চেয়েছে। তাই মিয়ানমারের এই সদিচ্ছা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোয় সব মিলিয়ে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েকমাসে।
এর পরেও বিভিন্ন সময়ে অল্প সংখ্যায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরও তা অব্যাহত ছিল।
বিশেষ করে, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বি-পাক্ষিক, বহুপাক্ষিক আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে একাধিকবার।
কিন্তু তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় এলেও বাস্তব রূপ পায়নি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল, যার মধ্যস্থতা করেছিল চীন।
এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।